প্রবাস আয় পাঠানোয় শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র, দ্বিতীয় আরব আমিরাত

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে প্রবাস আয় পাঠানোর ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আগের মাস জানুয়ারিতেও দেশটি প্রথম স্থানে ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রবাস আয়ের সামগ্রিক চিত্র
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে প্রবাস আয় এসেছে ২৫২ কোটি ৭৬ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে সর্বোচ্চ ৪৯ কোটি ১২ লাখ ৬০ হাজার ডলার। সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে এসেছে ৩৩ কোটি ৪৯ লাখ ৪০ হাজার ডলার, যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে সৌদি আরব, যেখান থেকে ফেব্রুয়ারিতে এসেছে ৩২ কোটি ৮৮ লাখ ৪০ হাজার ডলার। চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য (ইউকে), যেখান থেকে এসেছে ৩০ কোটি ৫৫ লাখ ২০ হাজার ডলার। পরবর্তী অবস্থানে রয়েছে মালয়েশিয়া, কুয়েত, ওমান, ইতালি, কাতার ও সিঙ্গাপুর।
শীর্ষ ১০ দেশের প্রবাস আয় (ফেব্রুয়ারি ২০২৫):
দেশ | প্রবাস আয় (মার্কিন ডলার) |
---|---|
যুক্তরাষ্ট্র | ৪৯ কোটি ১২ লাখ ৬০ হাজার |
সংযুক্ত আরব আমিরাত | ৩৩ কোটি ৪৯ লাখ ৪০ হাজার |
সৌদি আরব | ৩২ কোটি ৮৮ লাখ ৪০ হাজার |
যুক্তরাজ্য | ৩০ কোটি ৫৫ লাখ ২০ হাজার |
মালয়েশিয়া | ১৮ কোটি ৩৮ লাখ ৭০ হাজার |
কুয়েত | ১৪ কোটি ১১ লাখ ১০ হাজার |
ওমান | ১২ কোটি ৩৭ লাখ ২০ হাজার |
ইতালি | ১১ কোটি ১১ লাখ ২০ হাজার |
কাতার | ১০ কোটি ৩০ হাজার |
সিঙ্গাপুর | ৭ কোটি ৮৬ লাখ ২০ হাজার |
এছাড়া বাহরাইন থেকে এসেছে ৫ কোটি ৬২ লাখ ৫০ হাজার ডলার, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ৩ কোটি ৫ লাখ ৩০ হাজার ডলার, ফ্রান্স থেকে ২ কোটি ৪৩ লাখ ৬০ হাজার ডলার, জার্মানি থেকে ২ কোটি ২২ লাখ ৬০ হাজার ডলার, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ২ কোটি ২২ লাখ ৪০ হাজার ডলার, কানাডা থেকে ১ কোটি ৮৮ লাখ ৭০ হাজার ডলার, জর্দান থেকে ১ কোটি ১৪ লাখ ৭০ হাজার ডলার, পর্তুগাল থেকে ১ কোটি ৩৭ লাখ ১০ হাজার ডলার, গ্রিস থেকে ১ কোটি ২১ লাখ ৫০ হাজার ডলার, মালদ্বীপ থেকে ১ কোটি ২১ লাখ ২০ হাজার ডলার, অস্ট্রেলিয়া থেকে ১ কোটি ১৯ লাখ ১০ হাজার ডলার, মরিশাস থেকে ১ কোটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার, স্পেন থেকে ১ কোটি ৫ লাখ ৭০ হাজার ডলার, জাপান থেকে ৮০ লাখ ৮০ হাজার ডলার, ব্রুনাই দারুসসালাম থেকে ৬৭ লাখ ৩০ হাজার ডলার, ইরাক থেকে ৬০ লাখ ৩০ হাজার ডলার, লেবানন থেকে ৫৫ লাখ ৩০ হাজার ডলার, ফিনল্যান্ড থেকে ৩৫ লাখ ৪০ হাজার ডলার, সুইডেন থেকে ৩৩ লাখ ডলার এবং অস্ট্রিয়া থেকে ২৮ লাখ ৬০ হাজার ডলার।
প্রবাস আয়ের প্রবণতা ও প্রভাব
বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রবাস আয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা মূলত দেশটিতে বাংলাদেশি অভিবাসীদের উচ্চ বেতনের চাকরির ফলাফল। পাশাপাশি, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে আসা রেমিট্যান্সও বাংলাদেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিতে প্রবাসী আয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকার যদি প্রবাসীদের জন্য আরও আকর্ষণীয় বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করে, তাহলে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও বাড়বে।
প্রবাসী আয় বৃদ্ধি ও সরকারের উদ্যোগ
সরকার ইতোমধ্যে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বাড়ানোর জন্য বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- রেমিট্যান্স প্রণোদনা: সরকার প্রবাসীদের বৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠাতে উৎসাহিত করতে প্রণোদনা দিচ্ছে।
- ব্যাংকিং সুবিধা: বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে রেমিট্যান্স পাঠানোর সুযোগ বাড়ানো হয়েছে।
- নতুন বিনিয়োগ পরিকল্পনা: প্রবাসীদের বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি এই উদ্যোগগুলো সফল হয়, তাহলে আগামী দিনে রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও বৃদ্ধি পাবে এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে আরও শক্তিশালী হবে।