অর্থনীতি

পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে নতুন আইন প্রণয়ন করছে সরকার

বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরানোর জন্য সরকার বিশেষ একটি আইন প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি অধ্যাদেশ আকারে শিগগিরই কার্যকর করা হবে। আজ সোমবার ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।

পাচার হওয়া অর্থ ফেরানোর উদ্যোগ

গত ১৫ বছরে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে। এই অর্থ ফেরানোর জন্য নতুন আইন করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানান, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার একটি শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করেছিল। এই কমিটির তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত শেখ হাসিনার শাসনামলে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে। এর মধ্যে ১৭ বিলিয়ন ডলার শুধুমাত্র ব্যাংকিং খাত থেকে পাচার হয়েছে।

টাস্কফোর্স ও আইনি ব্যবস্থা

পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ১১ সদস্যের একটি টাস্কফোর্স গঠন করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এই টাস্কফোর্সের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আজকের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, বৈঠকে প্রথম সিদ্ধান্ত হিসেবে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার জন্য একটি বিশেষ আইন দ্রুত কার্যকর করা হবে। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই আইনটি চূড়ান্তভাবে প্রকাশ করা হবে। তিনি আরও বলেন, এই আইনটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পাচার হওয়া অর্থ দ্রুত ফেরত আনার প্রক্রিয়া সহজ হবে।

আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও আইন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান

সরকার ইতোমধ্যে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করেছে। সরকার ২০০টি আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বললেও এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আন্তর্জাতিকভাবে স্বনামধন্য ৩০টির মতো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করার পরিকল্পনা রয়েছে। এই নতুন আইনের ফলে আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তি করাও সহজ হবে।

কেন এই আইন গুরুত্বপূর্ণ?

অর্থ পাচার দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় সমস্যা। পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত আনা হলে তা দেশের উন্নয়নে ব্যবহার করা যাবে। পাশাপাশি এই আইন কার্যকর হলে ভবিষ্যতে অর্থ পাচার রোধ করাও সহজ হবে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, এটি বাংলাদেশের মানুষের টাকা, তাই একে ফেরত আনা সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার।

সরকারের এই উদ্যোগ দেশের অর্থনীতি এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে বিশেষ আইনের মাধ্যমে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হলে তা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য সহায়ক হবে। আগামী দিনে এই আইন কীভাবে বাস্তবায়িত হয়, তা নিয়ে সবার নজর থাকবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button