বাংলাদেশ

ফিটলিস্ট তালিকা হালনাগাদ করে এসপি-ওসি পদায়নের সুপারিশ

বাংলাদেশ পুলিশের কার্যক্রমকে আরও গতিশীল ও পেশাদারভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে ফিটলিস্ট বা যোগ্যতার তালিকা নিয়মিত হালনাগাদ করে পুলিশ সুপার (এসপি) এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পদায়নের সুপারিশ করেছে পুলিশ সংস্কার কমিশন। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এই সুপারিশ গৃহীত হয়, যা আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে বলে মনে করা হচ্ছে।

বৈঠকে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো

২৩ জুলাই রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া। বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে ২৮ জুলাই প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো চিঠিতে জানানো হয় যে, ফিটলিস্ট নিয়মিত হালনাগাদ করে কর্মকর্তাদের পদায়ন প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ ও দক্ষ করে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কর্মকর্তাদের যোগ্যতার মূল্যায়ন করে সময়মতো ফিটলিস্ট হালনাগাদ করা হবে এবং সেখান থেকে এসপি ও ওসি পদে পদায়ন করা হবে। এর ফলে মাঠপর্যায়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো সম্ভব হবে।

ফিটলিস্ট হালনাগাদের উদ্দেশ্য কী

ফিটলিস্ট বা যোগ্যতার তালিকা হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে কর্মক্ষমতা, অভিজ্ঞতা, সুনাম এবং পেশাদারিত্বের ভিত্তিতে কর্মকর্তাদের মূল্যায়ন করা হয়। এই তালিকা অনুযায়ী পদায়ন করলে কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়বে এবং দক্ষতা উন্নত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আগে এই প্রক্রিয়া নিয়মিতভাবে হালনাগাদ না হওয়ায় অনেক কর্মকর্তা উপযুক্ত সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতেন।

সুপারিশের অন্য গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো

বৈঠকে শুধু ফিটলিস্ট হালনাগাদ নয়, আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি)-এর সভায় যদি পুলিশের কোনো এজেন্ডা থাকে, তাহলে সেখানে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি)-কে উপস্থিত রাখার প্রস্তাব।

এ ছাড়া বিশেষায়িত পুলিশ ইউনিট যেমন সিআইডি, সাইবার ক্রাইম, বায়োমেট্রিক আইডেন্টিফিকেশন ফিঙ্গারপ্রিন্ট ইত্যাদি ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দক্ষ কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার দিয়ে পদায়ন করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

নারী পুলিশ সদস্যদের অংশগ্রহণ বাড়াতে পদ সৃষ্টি এবং নারী পুলিশ সংখ্যা ২৯ হাজারের বেশি করার বিষয়েও সুপারিশ করা হয়। একইসাথে বিভাগীয় পদোন্নতির ক্ষেত্রে বর্তমান নীতিমালা সংস্কার করে একবার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে তিন বছরের জন্য প্রমোশনের সুযোগ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

কেন এই পদক্ষেপ জরুরি

বিশেষজ্ঞদের মতে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাদের সঠিক মূল্যায়ন না হলে পুরো ব্যবস্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই এই পদক্ষেপটি বাংলাদেশ পুলিশের কাজের মান উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে।

সাবেক এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “নিয়মিত ফিটলিস্ট হালনাগাদ হলে যোগ্য কর্মকর্তারা সামনে আসবেন। এতে দক্ষতা ও ন্যায়সংগত পদায়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।”

নারী পুলিশ সদস্য বাড়ানোর পরিকল্পনা

নারী পুলিশ সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর সুপারিশ বৈঠকের অন্যতম আলোচিত বিষয় ছিল। বর্তমানে থানাসহ বিভিন্ন ইউনিটে নারী সদস্যের সংখ্যা সীমিত। বৈঠকে বলা হয়, নারী পুলিশ সংখ্যা ২৯,২৪৮-এ উন্নীত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যা নারী নিরাপত্তা ও সেবা কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করবে। নারী ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার, সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেনসহ অন্যান্য ইউনিটে নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ভবিষ্যতে কী হতে পারে

এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ পুলিশের কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে এই প্রক্রিয়া কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা এবং রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা বড় চ্যালেঞ্জ বলে তারা সতর্ক করেছেন।

অভিজ্ঞ মহলের মতে, যদি সঠিকভাবে এই পরিকল্পনাগুলো কার্যকর করা যায়, তবে পুলিশের কাজে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং দক্ষতা বাড়বে। এতে সাধারণ মানুষের আস্থাও বৃদ্ধি পাবে।

একজন বিশ্লেষকের মন্তব্য: “যোগ্যতার ভিত্তিতে পদায়ন হলে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থায় গতি আসবে এবং জনসেবার মান আরও উন্নত হবে।”

সারসংক্ষেপ  

ফিটলিস্ট হালনাগাদ করে এসপি-ওসি পদায়নের এই উদ্যোগটি আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। এখন সবার নজর থাকবে সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের দিকে। তবে এটি কতটা সফলভাবে প্রয়োগ হবে, তা নির্ভর করছে আগামী দিনের পদক্ষেপ ও মনিটরিংয়ের ওপর।

এম আর এম – ০৫৬২, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button