১০ মাস পর খাদ্যের মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের নিচে

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাবে, ১০ মাস পর খাদ্যের মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের নিচে নেমেছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ, যা গত বছরের মার্চের পর প্রথমবারের মতো এক অঙ্কের ঘরে নেমে এসেছে। অন্যদিকে, সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৩২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
মূল্যস্ফীতির বর্তমান পরিস্থিতি
গত বছরের মার্চ মাসের পর খাদ্যের মূল্যস্ফীতি কখনো ১০ শতাংশের নিচে নামেনি। ২০২৪ সালের মার্চ মাসে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এরপর ধারাবাহিকভাবে এটি বেড়ে যায় এবং সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়িয়ে দেয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে শীতকালীন সবজির সরবরাহ বৃদ্ধি এবং চালের বাজার তুলনামূলক স্থিতিশীল থাকায় খাদ্যের মূল্যস্ফীতিতে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ এসেছে।
বিবিএসের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ, যা ফেব্রুয়ারি মাসেও একই পর্যায়ে রয়েছে। যদিও খাদ্যের মূল্যস্ফীতি কমেছে, তবে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়েছে। জানুয়ারিতে এটি ছিল ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ, যা ফেব্রুয়ারিতে বেড়ে হয়েছে ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতি কমার কারণ
বিবিএসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু নীতিগত পরিবর্তনের কারণে মূল্যস্ফীতির ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে:
- শীতকালীন সবজির সরবরাহ বাড়ায় বাজারে দাম কমেছে।
- চালের বাজার তুলনামূলক স্থিতিশীল থাকায় খাদ্যপণ্যের দাম বাড়েনি।
- সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের শুল্ক-কর হ্রাস করেছে, যা বাজারে সরবরাহ নিশ্চিত করেছে।
- কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বাড়িয়ে অর্থনীতির অতিরিক্ত মুদ্রাসঞ্চালন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে।
মূল্যস্ফীতির প্রভাব ও সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা
মূল্যস্ফীতি বাড়লে সাধারণ মানুষের প্রকৃত আয় কমে যায়। উদাহরণস্বরূপ, যদি ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি পরিবারের মাসিক খরচ ১০০ টাকা হয়ে থাকে, তবে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে একই পণ্য ও সেবা কিনতে তাদের ১০৯ টাকা ৩২ পয়সা খরচ করতে হচ্ছে। অর্থাৎ, মূল্যস্ফীতির কারণে প্রতিটি ১০০ টাকার ব্যয়ে অতিরিক্ত ৯ টাকা ৩২ পয়সা খরচ হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের ওপর। তাদের আয় স্থিতিশীল থাকলেও ব্যয় বেড়ে যায়, ফলে দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় কাটছাঁট করতে হয়।
ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত
অর্থনীতিবিদদের মতে, খাদ্যের মূল্যস্ফীতি কমে আসা ইতিবাচক হলেও সামগ্রিকভাবে মূল্যস্ফীতি এখনও উচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। তারা পরামর্শ দিয়েছেন:
- নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ আরও নিশ্চিত করা।
- সুদের হার ও মুদ্রানীতিতে ভারসাম্য রক্ষা করা।
- কৃষি ও খাদ্যপণ্য উৎপাদনে আরও বিনিয়োগ করা।
- রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখতে বৈদেশিক বাণিজ্য নীতিতে পরিবর্তন আনা।
সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ এবং বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় থাকলে মূল্যস্ফীতির হার আরও কমতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজার ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবণতাও ভবিষ্যতে মূল্যস্ফীতির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।