বাংলাদেশ

বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক নতুন মোড় নিচ্ছে, চলছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক

Advertisement

দীর্ঘদিনের টানাপোড়েন পেরিয়ে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের নতুন অধ্যায় সূচিত হচ্ছে। দুই দেশের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শুরু হয়েছে রবিবার (২৪ আগস্ট) সকালে রাজধানীর বিলাসবহুল সোনারগাঁ হোটেলে। বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে।

এ বৈঠকে অন্তত ৬টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (MoU) সই হতে পারে বলে কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে। আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে— ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধির পদক্ষেপ, কৃষিক্ষেত্রে সহযোগিতা, জনগণের চলাচল সহজীকরণ, সংস্কৃতি বিনিময় এবং কনস্যুলার সেবা উন্নয়ন

বৈঠকের শুরু ও প্রধান আলোচ্য বিষয়

বৈঠকটি শুরু হয় সকাল ১০টায়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, পররাষ্ট্র সচিব নজরুল ইসলামসহ উচ্চপদস্থ কূটনীতিকেরা। অন্যদিকে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার

সূত্র জানায়, বৈঠকে আলোচনা হবে—
দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য শুল্ক সুবিধা ও নতুন বাণিজ্য চুক্তি
বিনিয়োগ সহজীকরণের জন্য যৌথ উদ্যোগ ও শিল্পাঞ্চল উন্নয়ন
কৃষি প্রযুক্তি ও খাদ্য নিরাপত্তায় সহযোগিতা বৃদ্ধি
দুই দেশের জনগণের যাতায়াত সহজ করতে ভিসা নীতি শিথিলকরণ
শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিনিময় কর্মসূচি জোরদার করা
সন্ত্রাস দমন, সীমান্ত নিরাপত্তা ও সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে সমঝোতা

ইসহাক দারের সফর: রাজনৈতিক মহলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু

পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার শনিবার দুপুরে দুই দিনের সফরে ঢাকায় পৌঁছান। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব নজরুল ইসলাম।

বিকেলে ইসহাক দার বৈঠক করেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের সঙ্গে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তানের এই সফর শুধু কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নয়ন নয়, বরং আঞ্চলিক রাজনীতির ভবিষ্যৎ চিত্র নির্ধারণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

আজ সন্ধ্যায় তার গুলশান কার্যালয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের কথা রয়েছে

বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক: অতীত ও বর্তমান প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে দুই দেশের সম্পর্ক নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গেছে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় ১৯৭৪ সালে
✔ পাকিস্তান বাংলাদেশের স্বাধীনতা স্বীকার করলেও যুদ্ধাপরাধের বিচার, বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা এবং রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে সম্পর্ক কখনোই স্থিতিশীল ছিল না।
✔ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যোগাযোগ সীমিত হলেও বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রয়েছে। বর্তমানে দুই দেশের বার্ষিক বাণিজ্য ১ বিলিয়ন ডলারেরও কম।

কূটনৈতিক সূত্রের মতে, এ বৈঠক সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। বিশেষ করে সন্ত্রাস দমন, জ্বালানি সহযোগিতা এবং আঞ্চলিক বাণিজ্যে অংশীদারিত্বের মতো বিষয়গুলো সামনে আসছে

সম্ভাব্য ৬ চুক্তি ও সমঝোতার খসড়া

১. বাণিজ্য সহজীকরণ চুক্তি: শুল্ক কমানো, নতুন বন্দর রুট খোলা।
২. বিনিয়োগ সহযোগিতা সমঝোতা: যৌথ শিল্পাঞ্চল, বিনিয়োগ সুরক্ষা।
৩. কৃষি সহযোগিতা চুক্তি: আধুনিক প্রযুক্তি বিনিময়, খাদ্য আমদানি।
৪. জনগণের চলাচল চুক্তি: ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করা।
৫. শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিনিময় চুক্তি: শিক্ষার্থী বিনিময় কর্মসূচি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
৬. কনস্যুলার সেবা চুক্তি: প্রবাসীদের সেবায় উন্নত সহযোগিতা।

বিশ্লেষকদের মতামত: সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কতটা উজ্জ্বল?

কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এ বৈঠক যদি ইতিবাচক ফল দেয় তবে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য দ্বিগুণ হতে পারে। একইসঙ্গে আঞ্চলিক রাজনীতিতে ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানও গুরুত্বপূর্ণ হবে।

বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ড. রাশেদুল ইসলাম বলেন—
“পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত হলে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক ব্লক আরও শক্তিশালী হবে। তবে এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক আস্থা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।”

বাংলাদেশের জন্য লাভজনক দিকগুলো কী?

বাণিজ্যে বৈচিত্র্য: পাকিস্তান থেকে কাঁচামাল আমদানির সুযোগ।
কৃষিক্ষেত্রে নতুন প্রযুক্তি: সেচ ও বীজ উন্নয়নে সহযোগিতা।
শিক্ষা-বিনিময়: পাকিস্তানি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথ গবেষণা।
প্রবাসী সুরক্ষা: মধ্যপ্রাচ্যগামী শ্রমবাজারে যৌথ উদ্যোগ।

পাকিস্তানের জন্য সুবিধা কোথায়?

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রবেশাধিকার: বাংলাদেশের মাধ্যমে পূর্ব এশিয়ায় ব্যবসা সম্প্রসারণ।
গার্মেন্টস শিল্পের অভিজ্ঞতা: টেক্সটাইল সেক্টরে পারস্পরিক সহযোগিতা।
কৃষিজ পণ্য রপ্তানি: চাল, ফলমূল, গম রপ্তানির সুযোগ।

এই বৈঠক কেবল একটি আনুষ্ঠানিক সভা নয়, বরং এটি দুই দেশের সম্পর্কের নতুন দিগন্তের ইঙ্গিত বহন করছে। যদি পরিকল্পনা অনুযায়ী সব চুক্তি সই হয়, তাহলে বাংলাদেশের জন্য নতুন অর্থনৈতিক সুযোগের দরজা খুলবে এবং পাকিস্তানের জন্যও আঞ্চলিক বাণিজ্যে শক্তিশালী ভূমিকা রাখার পথ তৈরি হবে।

MAH – 12458 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button