শ্বেতপত্র ও টাস্কফোর্স: অর্থনীতি সংস্কারে আগ্রহ কম, কমিটিতে হতাশা

অর্থনীতি নিয়ে সংস্কারের দুটি প্রতিবেদন জমা পড়ে আছে, কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে সুপারিশ বাস্তবায়নে জোরালো কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে অর্থনীতিতে কাঠামোগত সংস্কারের প্রত্যাশা পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অর্থনীতিতে দুর্নীতি-অনিয়ম এবং ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক কৌশল নির্ধারণ নিয়ে আলাদা দুটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। একটি হলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বাধীন শ্বেতপত্র, অন্যটি কে এ এস মুরশিদের নেতৃত্বাধীন টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন।
প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময়
শ্বেতপত্র প্রতিবেদনটি ১ ডিসেম্বর জমা দেওয়া হয় এবং টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন ৩০ জানুয়ারি। দুই প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়ন নিয়ে তেমন কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় কমিটির সদস্যদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা শ্বেতপত্র গ্রহণ করেছেন, কিন্তু উপদেষ্টা পরিষদে যাঁরা প্রাসঙ্গিক, তাঁরা গ্রহণ করেননি।”
অর্থনৈতিক পরিস্থিতি
অর্থনীতির দুর্নীতি, অর্থ পাচার, ব্যাংক খাতের অনিয়ম, বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতির মতো বিষয়গুলো শ্বেতপত্রে উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে।
সুপারিশ ও বাস্তবায়ন
শ্বেতপত্রে সাতটি বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটের একটি কাঠামো তৈরি করা। কিন্তু এসব সুপারিশের বাস্তবায়নে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষস্থানীয় একজন কর্মকর্তা জানান, “আগামী অর্থবছরের বাজেটে শ্বেতপত্র ও টাস্কফোর্সের সুপারিশগুলোর প্রতিফলন থাকবে। তবে সব সুপারিশ রাতারাতি বাস্তবায়ন করা যাবে না।”
টাস্কফোর্সের সুপারিশ
টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনেও প্রগতিশীল করব্যবস্থা চালুর সুপারিশ করা হয়েছে, যেখানে ধনীদের কাছ থেকে বেশি কর আদায় করা হবে। তবে, এই সুপারিশগুলোর বাস্তবায়নে তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, “এ দেশে ভালো ভালো নীতি হয়, কিন্তু বাস্তবায়িত হয় না।” তিনি আশা প্রকাশ করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা রয়েছে এবং শ্বেতপত্র ও টাস্কফোর্সের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা উচিত।
বর্তমান পরিস্থিতি দেশের অর্থনীতির জন্য উদ্বেগজনক। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যাতে অর্থনৈতিক সংস্কারের সুপারিশগুলো বাস্তবায়িত হয় এবং দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল হয়।