শিল্প কারখানা বন্ধের হিড়িক! সাত মাসে ৯৫টি বন্ধ তিন শিল্প এলাকায়

গত সাত মাসে গাজীপুর, সাভার, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীর ৯৫টি কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে প্রায় ৬২ হাজার শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। অধিকাংশ শ্রমিক এখনও তাঁদের বকেয়া মজুরি এবং সার্ভিস বেনিফিট (চাকরির অবসায়নের পর প্রাপ্ত আর্থিক সুবিধা) বুঝে পাননি।
বন্ধের কারণ
কারখানা বন্ধের প্রধান তিনটি কারণ হলো:
- অর্থনৈতিক সংকট: বেশির ভাগ মালিক আর্থিক সংকট ও ক্রয়াদেশের অভাবে কারখানা বন্ধ করেছেন।
- রাজনৈতিক সহিংসতা: আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত মালিকদের কয়েকটি কারখানায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
- ব্যবসায়ীদের আত্মগোপন: ক্ষমতাচ্যুত বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ কিছু ব্যবসায়ী আত্মগোপনে থাকায় তাঁদের কারখানা রুগ্ণ হয়ে পড়েছে।
কারখানার অবস্থান
শিল্প পুলিশ জানায়, বন্ধ হওয়া কারখানার মধ্যে গাজীপুরে ৫৪টি, নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদীতে ২৩টি ও সাভার-আশুলিয়ায় ১৮টি। এসব কারখানায় ৬১ হাজার ৮৮১ জন শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করতেন। বেকার শ্রমিকেরা প্রায়ই কারখানা খুলে দেওয়ার ও বকেয়া পাওনার দাবিতে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছেন, যা সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়াচ্ছে।
শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ
নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, “হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানার শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-ভাতা জোগাড় করতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে।” তিনি জানান, বেকার হওয়া শ্রমিকদের কেউ কেউ চাকরি পাচ্ছেন, কেউ কেউ গ্রামে চলে যাচ্ছেন।
সরকারের উদ্যোগ
শ্রমিক নেতা বাবুল আক্তার বলেন, “চাকরি হারানো শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে সরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ দরকার।” তিনি আরও বলেন, “সরকার উদ্যোগ নেওয়ার কারণে বেক্সিমকোর শ্রমিকেরা হয়তো ন্যায্য ক্ষতিপূরণ পাবেন। অন্য কারখানার শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিতে সরকারের উচ্চপর্যায়ে একটি ত্রিপক্ষীয় কমিটি করা দরকার।”
বর্তমান পরিস্থিতি দেশের শিল্প খাতের জন্য উদ্বেগজনক। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যাতে শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা যায় এবং বন্ধ হওয়া কারখানাগুলো পুনরায় চালু করা সম্ভব হয়।