অর্থনীতি

মার্চে জ্বালানি তেলের দাম অপরিবর্তিত: সরকারের নতুন প্রজ্ঞাপন

বাংলাদেশ সরকার মার্চ মাসের জন্য জ্বালানি তেলের দাম অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে শনিবার জারি করা এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়। সরকার তেলের মূল্য স্থিতিশীল রেখে জনগণের ওপর অযথা চাপ কমাতে চায় বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

বিদ্যমান দাম ও প্রজ্ঞাপন

সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, মার্চ মাসের জন্য ডিজেল ও কেরোসিন প্রতি লিটার ১০৫ টাকা, অকটেন ১২৬ টাকা এবং পেট্রোল ১২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত ৩১ জানুয়ারি পেট্রোল, অকটেন, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে এক টাকা বাড়ানো হয়েছিল, যা ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হয়। তবে জানুয়ারি মাসে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে এক টাকা কমানো হলেও পেট্রোল ও অকটেনের দাম অপরিবর্তিত ছিল।

জ্বালানি মূল্য নির্ধারণের বর্তমান নীতি

বাংলাদেশ সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণে আন্তর্জাতিক বাজারের ওঠানামার ওপর নজর রাখছে। তবে এখন পর্যন্ত প্রতি মাসে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) এর দাম নির্ধারণের জন্য বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) দায়িত্ব পালন করে আসছে। একইভাবে, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ প্রতি মাসে ডিজেল, কেরোসিন, অকটেন ও পেট্রোলের মূল্য নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) সূত্রে জানা গেছে, দেশে বছরে প্রায় ৭৪ লাখ টন জ্বালানি তেলের চাহিদা রয়েছে, যার মধ্যে ৭৫ শতাংশ ডিজেলের ব্যবহার হয়।

বিভিন্ন খাতে জ্বালানির ব্যবহার

দেশে ব্যবহৃত মোট জ্বালানি তেলের মধ্যে:

  • ডিজেল মূলত কৃষি সেচ, পরিবহন এবং জেনারেটরে ব্যবহৃত হয়।
  • কেরোসিন সাধারণত নিম্নআয়ের জনগোষ্ঠী রান্নার কাজে ব্যবহার করে।
  • অকটেন ও পেট্রোল ব্যক্তিগত ও গণপরিবহন ব্যবহারে জনপ্রিয়।
  • জেট ফুয়েল ও ফার্নেস অয়েল উড়োজাহাজ ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত হয়।

আন্তর্জাতিক প্রভাব ও সরকারের উদ্যোগ

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামের ওঠানামার কারণে সরকার স্থানীয় বাজারে সরাসরি প্রভাব না পড়তে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সমন্বয় রেখে নিয়মিত তেলের দাম পুনঃনির্ধারণের একটি নীতি গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ উন্নত বিশ্বেও প্রতি মাসে জ্বালানি তেলের মূল্য পুনর্মূল্যায়ন করা হয়। বাংলাদেশও একইভাবে প্রতি মাসে মূল্য নির্ধারণ করছে। তবে ভর্তুকি ও বাজার ব্যবস্থাপনার কারণে অনেক সময় বিশ্ববাজারের তুলনায় দেশে দামের তারতম্য দেখা যায়।

বাজারে প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

বিশ্লেষকদের মতে, সরকারের এ সিদ্ধান্ত বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে। তবে আসন্ন রমজান মাসকে কেন্দ্র করে বাজারে তেলের কৃত্রিম সংকট বা মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এজন্য বাজার তদারকি বাড়ানোর সুপারিশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক বাজারের ওঠানামা বিবেচনা করে দেশের জ্বালানি তেলের মূল্য পুনরায় পর্যালোচনা করা হবে। প্রয়োজনে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করা হতে পারে।

উপসংহার

মার্চ মাসে জ্বালানি তেলের দাম অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত দেশের সাধারণ জনগণের জন্য স্বস্তিদায়ক হতে পারে। তবে বাজারে স্থিতিশীলতা রক্ষায় সরকারকে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। বিশ্ববাজারের মূল্য ওঠানামার পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ও জ্বালানির মজুত পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ভবিষ্যতে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেবে বলে মনে করা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button