বাংলাদেশ

তালতলা করাতকলে অগ্নিকাণ্ড: আগুন নিয়ন্ত্রণে ৯টি ফায়ার ইউনিট

রাজধানীর খিলগাঁওয়ের তালতলা এলাকায় একটি করাতকলে (স মিল) ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আজ শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটের দিকে এ আগুনের সূত্রপাত হয়। এর পরপরই ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে এবং দীর্ঘ চেষ্টা চালিয়ে রাত ৯টা ৩৫ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।

আগুন লাগার পর, এলাকায় আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। অনেক বাসিন্দা জানিয়েছেন যে, তারা বেশ দূর থেকেই আগুনের শিখা দেখতে পেয়েছেন এবং কিছু সময় পর পর বিস্ফোরণের শব্দও শোনা গেছে। এ ঘটনায় পুরো এলাকা বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়ে, যা পরিস্থিতির আরও জটিলতা সৃষ্টি করেছে।

ফায়ার সার্ভিসের তৎপরতা

ফায়ার সার্ভিসের সূত্র অনুযায়ী, আগুনের সূত্রপাতের ব্যাপারে এখনও স্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে, দ্রুত আগুনের প্রখরতা বৃদ্ধি পাওয়ায়, ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট একযোগে আগুন নেভাতে কাজ শুরু করে। এদের মধ্যে কয়েকটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার পরও ভয়ের মাত্রা ছিল তীব্র।

ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার রাশেদ বিন খালিদ জানান, “প্রাথমিকভাবে ঘটনাস্থলে আটটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা শুরু করে, পরে আরও তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। কিছুক্ষণের মধ্যে আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। তবে এখনো আগুন লাগার সঠিক কারণ জানা যায়নি।”

আতঙ্কিত এলাকাবাসী

এদিকে, তালতলা এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা কামরুন নাহার বলেন, “আমরা কয়েকশ’ গজ দূর থেকে আগুনের শিখা দেখতে পাচ্ছিলাম এবং কিছুক্ষণ পর পর বিস্ফোরণের আওয়াজও শুনতে পাচ্ছিলাম। এখন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ ছিল।”

এলাকার অন্য বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তারা প্রথমে বুঝতে পারেননি যে এটা কি ধরনের আগুন, তবে দ্রুত আগুনের তীব্রতা বাড়তে থাকলে তারা বিষয়টি আঁচ করতে পারেন। স্থানীয় প্রশাসন ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে।

কেন ঘটলো এই অগ্নিকাণ্ড?

যদিও অগ্নিকাণ্ডের কারণ এখনও পরিষ্কার হয়নি, তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে যে এটি একটি কারখানায় সংঘটিত দুর্ঘটনা হতে পারে। সংশ্লিষ্ট স্থানগুলোতে অধিক পরিমাণে দাহ্য পদার্থ, তেল বা গ্যাসের উপস্থিতি থাকার সম্ভাবনা থাকতে পারে, যা আগুনের তীব্রতা বাড়িয়েছে।

এছাড়া, কিছু স্থানীয়রা মনে করছেন যে, ফ্যাক্টরির ভিতরে বৈদ্যুতিক ত্রুটি বা ল্যাম্পের গরম হয়ে যাওয়া কারণে এই আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। কিন্তু কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সুতরাং, অগ্নিকাণ্ডের পূর্ণ তদন্ত শেষে এর কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হবে।

বিপদে উদ্ধার তৎপরতা

আগুনের তীব্রতার কারণে এলাকাটি প্রায় এক ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছিল। তবে ফায়ার সার্ভিস এবং স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন দ্রুত উদ্ধার কাজ শুরু করেছে এবং নিরাপত্তার জন্য পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছে। নাগরিকদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং কারখানার ভিতরে কেউ আটকা পড়ে আছেন কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং ভবিষ্যত সতর্কতা

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা আবারও মনে করিয়ে দেয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার গুরুত্ব। বিশেষ করে, শিল্প কারখানাগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কঠোর করতে হবে, যাতে এই ধরনের দুর্ঘটনা ভবিষ্যতে না ঘটে। একইসাথে, স্থানীয় প্রশাসন এবং ফায়ার সার্ভিসের দ্রুত পদক্ষেপে বড় ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে।

এছাড়া, ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা একে অপরকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন এবং জনগণকে এই ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে আরও সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

শেষ কথা

খিলগাঁওয়ের তালতলায় করাতকলে অগ্নিকাণ্ডের এই ঘটনায় বিশাল ক্ষতির আশঙ্কা ছিল, কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের দ্রুত পদক্ষেপ এবং সঠিক তৎপরতার কারণে বড় ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে। এখনই সবচেয়ে জরুরি হলো আগুন লাগার সঠিক কারণ জানা এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের দুর্ঘটনা রোধ করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।

এমন ঘটনা সাধারণ জনগণের জন্য একটি সতর্কবার্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবাইকে সচেতন থাকতে হবে এবং আগুনের মতো বিপদজনক পরিস্থিতির ক্ষেত্রে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

#খিলগাঁও #তালতলা #অগ্নিকাণ্ড #ফায়ার_সার্ভিস #ঢাকা #করাতকল #নিরাপত্তা

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button