অর্থনীতি

রাজস্ব আদায়ে বড় ঘাটতি, সাত মাসে কমলো ৫১ হাজার কোটি টাকা

চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হয়েছে ৫১ হাজার কোটি টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এই সময়ে ১ লাখ ৯৫ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে, যেখানে আদায়ের লক্ষ্য ছিল ২ লাখ ৪৬ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ, লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আদায় কমেছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে।

এ বছর এনবিআরের জন্য সংশোধিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যেখানে মূল লক্ষ্য ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে পাওয়া সাময়িক তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব রাজস্ব আদায়ে পড়েছে। এছাড়া, দেশের অর্থনীতি তথা ব্যবসা-বাণিজ্যের শ্লথগতিও রাজস্ব আদায়ে পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ।

রাজস্ব আদায়ের খাতভিত্তিক বিশ্লেষণ

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, জুলাই-জানুয়ারি মাসে আমদানি, ভ্যাট এবং আয়কর—এই তিন খাতের মধ্যে কোনোটিতেই সাত মাসের লক্ষ্য পূরণ হয়নি।

আয়কর খাতে ঘাটতি:
জুলাই-জানুয়ারি সময়ে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি দেখা গেছে আয়কর খাতে। এই খাতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৮৮ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা, কিন্তু আদায় হয়েছে মাত্র ৬৪ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। ফলে, আয়করে ঘাটতি হয়েছে ২৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা।

আমদানি খাতে ঘাটতি:
অন্যদিকে, আমদানি খাতে ৭০ হাজার ৫১২ কোটি টাকার লক্ষ্যের বিপরীতে আদায় হয়েছে ৫৮ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এই খাতে ঘাটতি হয়েছে ১২ হাজার ৩০২ কোটি টাকা।

ভ্যাট খাতে পরিস্থিতি:
গত জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ভ্যাট খাতে আদায় হয়েছে ৭৩ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা, যেখানে লক্ষ্য ছিল ৮৮ হাজার ৮ কোটি টাকা।

অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ

রাজস্ব আদায়ে এই ঘাটতি দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের শ্লথগতির কারণে রাজস্ব আদায় কমে যাওয়ার ফলে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প এবং সামাজিক সেবা কার্যক্রমে প্রভাব পড়তে পারে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

এনবিআর কর্তৃপক্ষের মতে, রাজস্ব আদায় বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে করদাতাদের সচেতনতা বৃদ্ধি, কর ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ উন্নত করা।

রাজস্ব আদায়ে এই ঘাটতি দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি সংকেত। সরকারের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যাতে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পায় এবং দেশের উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সম্ভব হয়। দেশের অর্থনীতির জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়, যেখানে সঠিক পরিকল্পনা ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button