বাংলাদেশ

প্রধান উপদেষ্টা, যতোই চ্যালেঞ্জিং হোক, সুস্থ সবল প্রজন্ম গড়ে তুলতেই হবে

Advertisement

বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগ (NCDs) বর্তমানে জনস্বাস্থ্যের অন্যতম প্রধান হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “যতোই চ্যালেঞ্জিং হোক, সুস্থ সবল প্রজন্ম গড়ে তুলতেই হবে।” তিনি বুধবার সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় সহযোগিতা বৃদ্ধির নিমিত্ত ‘যৌথ ঘোষণাপত্র’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন।

অসংক্রামক রোগের বর্তমান পরিস্থিতি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) ২০২২ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর শতকরা ৭১ শতাংশ ঘটে থাকে অসংক্রামক রোগের কারণে। এর মধ্যে শতকরা ৫১ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয় ৭০ বছর বয়সের নিচে, যাকে আমরা অকাল মৃত্যু হিসেবে বিবেচনা করে থাকি। এছাড়া, ব্যক্তিগত চিকিৎসা ব্যয়ের (আউট অব পকেট এক্সপেন্ডিচার) ৬৯ শতাংশ, যার বেশির ভাগ অসংক্রামক রোগের জন্য ব্যয় হয়।

অসংক্রামক রোগের মধ্যে প্রধানত হৃদরোগ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি রোগ ও দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসযন্ত্রের রোগ উল্লেখযোগ্য। এই রোগগুলো সাধারণত জীবনযাত্রার অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস, যেমন অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক অক্রিয়তা, ধূমপান ও মদ্যপান, মানসিক চাপ ও বায়ু দূষণের কারণে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সরকারের উদ্যোগ ও আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতি নিশ্চিত করতে হলে দক্ষ ও কর্মক্ষম মানবসম্পদ দরকার। দক্ষ ও কর্মক্ষম মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে না পারলে ব্যক্তিগত জীবন থেকে জাতীয় উন্নয়ন-কোনোটিই যথাযথভাবে করা যাবে না।” তিনি আরও বলেন, “এটি জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক, যা শুধু স্বাস্থ্যখাত নয়, আমাদের সামগ্রিক অর্থনীতি, সামাজিক নিরাপত্তা এবং টেকসই উন্নয়নের সঙ্গেও নিবিড়ভাবে জড়িত।”

তিনি উল্লেখ করেন, “স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের একার পক্ষে এটা সম্ভব নয়। এজন্য সব মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা দরকার। খাদ্য, কৃষি, শিক্ষা, ক্রীড়া, স্থানীয় সরকার, গণপূর্ত এমন প্রতিটি খাতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। প্রতিটি খাত থেকে দরকার সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা ও নিবিড় উদ্যোগ।”

চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগের চিকিৎসা ব্যয় অত্যধিক বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্যান্সার, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের মতো রোগের চিকিৎসা খরচ সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। অনেক পরিবার এই ব্যয় বহন করতে না পেরে আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২২ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর শতকরা ৭১ শতাংশ ঘটে থাকে অসংক্রামক রোগের কারণে।

এছাড়া, স্বাস্থ্যসেবা খাতে জনবল ও অবকাঠামোগত দুর্বলতা, জনসচেতনার অভাব ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার অভাব অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

ভবিষ্যতে, সরকারের পক্ষ থেকে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন প্রচার, প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণ ও চিকিৎসা খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

অসংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সরকারের আন্তরিকতা ও উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তবে, এই উদ্যোগ সফল করতে হলে প্রতিটি নাগরিকের সচেতনতা, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও সরকারের প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। শুধু চিকিৎসা নয়, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি করেই আমরা একটি সুস্থ ও সবল জাতি গঠন করতে পারব।

MAH – 12427 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button