নতুন নোটেও থাকছে শেখ মুজিবের ছবি

বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষণা করেছে যে আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ১৯ মার্চ থেকে নতুন নোট বাজারে আসবে। তবে নতুন আসন্ন নোটগুলোতেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি অক্ষুণ্ণ থাকবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন যে ৫, ২০ ও ৫০ টাকার নোটেও শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিচ্ছবি থাকবে। তবে ১০০, ২০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটের ক্ষেত্রে ডিজাইনে কোনো পরিবর্তন আসছে না।
পূর্বের নোটই বাজারে আসছে
বাংলাদেশ ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নতুন করে কোনো নোট ছাপানো হচ্ছে না। বরং পূর্বে ছাপানো নোটগুলোকেই বাজারে ছাড়া হবে। এর প্রধান কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে বিপুল পরিমাণে নতুন ছাপানো নোট রয়েছে। নতুন করে ছাপানোর প্রয়োজনীয়তা না থাকায় সেই অর্থ খরচ না করে সংরক্ষিত নোটগুলোই বাজারে আনা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, “বর্তমানে আমাদের হাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ নতুন নোট রয়েছে। যদি এগুলো বাতিল করে নতুন নোট ছাপানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তবে সরকারের বিপুল অর্থ অপচয় হবে। তাই বাংলাদেশ ব্যাংক এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, পূর্বে ছাপানো নোটগুলোই বাজারে ছাড়া হবে।”
নতুন ডিজাইনের নোট আসছে এপ্রিল-মে মাসে
যদিও মার্চে বাজারে আসা নোটগুলো পুরনো ছাপার, তবে আগামী এপ্রিল-মে মাস নাগাদ বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন ডিজাইনের নোট চালু করতে পারে বলে জানা গেছে। এসব নতুন নোটের ডিজাইন ইতোমধ্যেই চূড়ান্ত হয়েছে এবং এতে কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, “নতুন ছাপা নোটে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির পরিবর্তে ধর্মীয় স্থাপনা, বাঙালি ঐতিহ্য এবং জুলাই বিপ্লবের দোলচিত্র বা গ্রাফিতি যুক্ত করা হতে পারে। তবে চূড়ান্ত অনুমোদনের পরই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
২০ হাজার কোটি টাকার নোট স্টক আছে
বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বর্তমানে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সংবলিত প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট সংরক্ষিত রয়েছে। এই নোটগুলো ধাপে ধাপে বাজারে ছাড়া হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিকল্পনা অনুসারে, প্রয়োজন অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে এই নোট সরবরাহ করা হবে, যাতে অর্থনীতিতে কোনো ধরণের সংকট তৈরি না হয়।
একজন ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, “দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং নগদ লেনদেন স্বাভাবিক রাখতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাজারে চাহিদা অনুযায়ী নতুন নোট সরবরাহ করা হবে।”
নতুন নোট চালুর প্রভাব
নতুন নোট বাজারে আসার ফলে সাধারণ জনগণের মধ্যে এক ধরণের উচ্ছ্বাস দেখা যায়। অনেকেই নতুন নোট সংগ্রহ করতে আগ্রহী হন, বিশেষ করে ঈদের সময় এটি ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি করে। তবে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, নতুন নোট ছাপানোর পরিবর্তে বিদ্যমান নোট ব্যবহারের সিদ্ধান্ত ব্যাংকের জন্য একটি সাশ্রয়ী পদক্ষেপ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুব হাসান বলেন, “নতুন নোট ছাপাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি যথাযথ পরিকল্পনা নিয়ে পুরনো স্টক থেকে নোট সরবরাহ করতে পারে, তবে সেটি অর্থনৈতিক দিক থেকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হবে।”
ব্যাংকগুলোর প্রস্তুতি
ঈদুল ফিতরের আগে নতুন নোট সরবরাহের জন্য দেশের সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলো প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকের সঙ্গে সমন্বয় করে নির্দিষ্ট শাখাগুলোতে নতুন নোট বিতরণের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে।
একটি শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপক বলেন, “ঈদের সময় গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী নতুন নোট সরবরাহ করতে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্ধারিত শাখাগুলোতে নতুন নোট বিতরণ করা হবে।”
নোট বিনিময়ের নিয়ম
বাংলাদেশ ব্যাংক সাধারণ জনগণের জন্য নতুন নোট বিনিময়ের একটি নির্দিষ্ট নিয়ম চালু রেখেছে। নির্দিষ্ট পরিমাণ পুরনো নোটের বিনিময়ে নতুন নোট সংগ্রহ করা যাবে। তবে নতুন নোট সংগ্রহের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মানতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, “একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১৮,০০০ টাকা পর্যন্ত নতুন নোট সংগ্রহ করতে পারবেন। নতুন নোট নিতে হলে অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্টের ফটোকপি দেখাতে হবে।”
সাধারণ জনগণের প্রতিক্রিয়া
নতুন নোট নিয়ে সাধারণ জনগণের মধ্যে ইতিমধ্যে ব্যাপক কৌতূহল দেখা গেছে। অনেকেই ব্যাংকের শাখাগুলোতে গিয়ে নতুন নোটের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। বিশেষ করে ছোট নোটগুলোতে বঙ্গবন্ধুর ছবি থাকায় অনেকে তা সংগ্রহ করতে আগ্রহী।