অর্থনীতি

প্রথমবারের মতো সোনার ভরি দেড় লাখ টাকা ছাড়াল

দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সোনার ভরি দেড় লাখ টাকা ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) আজ সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির ফলে স্থানীয় বাজারেও মূল্য সমন্বয় করা হয়েছে। নতুন দাম অনুযায়ী, ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫১ হাজার ২৮২ টাকা, যা এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ।

নতুন মূল্যতালিকা ও মূল্যবৃদ্ধির কারণ

সোমবার প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বাজুস জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশীয় বাজারেও মূল্য সংশোধন করা হয়েছে। নতুন মূল্য মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হবে।

নতুন দামের তালিকা অনুযায়ী:

  • ২২ ক্যারেট সোনা: ১,৫১,২৮২ টাকা
  • ২১ ক্যারেট সোনা: ১,৪৪,৪০০ টাকা
  • ১৮ ক্যারেট সোনা: ১,২৩,৭৬৭ টাকা
  • সনাতন পদ্ধতির সোনা: ১,০১,৯৩২ টাকা

এই দফায় প্রতি ভরিতে সর্বোচ্চ ১,৪৭০ টাকা দাম বেড়েছে, যা চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে চতুর্থবারের মতো সোনার দাম বৃদ্ধির ঘটনা।

সোনার দাম বাড়ার প্রবণতা

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেই চারবার সোনার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্বশেষ ১০ ফেব্রুয়ারি প্রতি ভরিতে ১,১৯৪ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছিল, তখন ২২ ক্যারেটের সোনার দাম ছিল ১,৪৯,৮১২ টাকা।

নতুন দামের সঙ্গে আগের দামের তুলনা করলে দেখা যায়:

  • ২২ ক্যারেট সোনায় বৃদ্ধি: ১,৪৭০ টাকা
  • ২১ ক্যারেট সোনায় বৃদ্ধি: ১,৩৯৯ টাকা
  • ১৮ ক্যারেট সোনায় বৃদ্ধি: ১,১৯০ টাকা
  • সনাতন পদ্ধতির সোনায় বৃদ্ধি: ১,০১৫ টাকা

বাজার বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্ববাজারে অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও মুদ্রাস্ফীতির কারণে স্বর্ণের চাহিদা বাড়ছে, যা মূল্যবৃদ্ধির মূল কারণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দর বাড়লে স্থানীয় বাজারেও তার প্রভাব পড়ে।

বাংলাদেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির পেছনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে:

  1. আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি: বিশ্বব্যাপী ডলার দুর্বল হওয়ার কারণে বিনিয়োগকারীরা সোনার দিকে ঝুঁকছে।
  2. মুদ্রাস্ফীতি ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা: বড় অর্থনীতিগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সুদের হার বৃদ্ধি করছে, যার ফলে বিনিয়োগকারীরা সোনাকে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে দেখছে।
  3. স্থানীয় চাহিদার বৃদ্ধি: বাংলাদেশে বিয়ের মৌসুমসহ বিভিন্ন কারণে সোনার চাহিদা বেড়ে যায়।

বাজারে ক্রেতাদের প্রতিক্রিয়া

সোনার দাম বাড়ায় স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সাধারণ ক্রেতাদের প্রতিক্রিয়াও মিশ্র। বিশেষ করে বিয়ের মৌসুমে সোনার উচ্চমূল্য অনেক ক্রেতার জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঢাকার গুলিস্তান এলাকার এক ক্রেতা বলেন, “বিয়ের জন্য সোনা কিনতে এসেছিলাম, কিন্তু দাম অনেক বেশি হয়ে যাওয়ায় এখন চিন্তায় পড়েছি।”

অন্যদিকে, স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, দাম বাড়লেও ক্রেতাদের আগ্রহ কমেনি। পুরান ঢাকার এক জুয়েলারি ব্যবসায়ী জানান, “সোনার দাম বাড়লেও গ্রাহকরা কিনছেন, কারণ তারা ভবিষ্যতে আরও দাম বাড়ার আশঙ্কা করছেন।”

ভবিষ্যৎ প্রবণতা

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বর্ণের দাম আরও বাড়তে পারে যদি আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা অব্যাহত থাকে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বর্ণ মজুদের প্রবণতা এর অন্যতম কারণ হতে পারে।

বাজুসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বাজার পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে ভবিষ্যতে আরও দাম পরিবর্তন হতে পারে। এ জন্য ক্রেতাদের সদ্য ঘোষিত মূল্যের ওপর ভিত্তি করে ক্রয়-বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে।

উপসংহার

প্রথমবারের মতো দেশে সোনার ভরি দেড় লাখ টাকা ছাড়ানোর ঘটনা শুধু বাজার বিশ্লেষকদের জন্য নয়, সাধারণ ক্রেতাদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। স্বর্ণের এই দামবৃদ্ধি অর্থনীতির পরিবর্তন ও বিশ্ববাজারের গতিশীলতার প্রতিফলন। ক্রেতাদের জন্য এটি চাপ সৃষ্টি করলেও বিনিয়োগকারীদের জন্য স্বর্ণ আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। এখন দেখার বিষয়, ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক বাজারের ওঠানামা দেশীয় বাজারে কী প্রভাব ফেলে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button