অর্থনীতি

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ১৪৭ কোটি টাকা, ৭ মাসে খরচ মাত্র ৪৭ লাখ টাকা

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বর্তমানে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই মন্ত্রণালয়ের জন্য সাতটি প্রকল্পে মোট ১৪৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে পাকিস্তান, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ভুটান, ব্রুনেই এবং সৌদি আরবে চ্যান্সারি কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ। তবে, আশ্চর্যের বিষয় হলো, জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে এই বরাদ্দের মধ্যে মাত্র ৪৭ লাখ টাকা খরচ হয়েছে, যা মোট বরাদ্দের মাত্র ০.৩৩ শতাংশ।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) জানুয়ারি মাস পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়নের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ছয় বছরের মধ্যে এই সাত মাসে এডিপিতে সবচেয়ে কম টাকা খরচ হয়েছে।

অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের অবস্থাও খারাপ

এটি শুধু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমস্যা নয়, বরং ১১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অবস্থা একই রকম। এই মন্ত্রণালয়গুলো তাদের বরাদ্দের মাত্র ১০ শতাংশ খরচ করতে পেরেছে। এর মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, জননিরাপত্তা বিভাগ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয়।

খরচের পরিমাণে ব্যাপক হ্রাস

চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে এডিপিতে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা কম খরচ হয়েছে। এর মানে হলো, পূর্ববর্তী বছরে প্রকল্পের মাধ্যমে যে পরিমাণ টাকা খরচ করা হয়েছিল, এবারে তা-ও ব্যয় করা সম্ভব হচ্ছে না। গত ছয় বছরের মধ্যে এটি সবচেয়ে কম খরচের ঘটনা।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মনে করেন, জুলাই-আগস্টের আন্দোলন, ক্ষমতার পরিবর্তন এবং ঠিকাদার ও প্রকল্প পরিচালকদের খুঁজে না পাওয়ার কারণে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। চলতি অর্থবছরে মোট ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৯ কোটি টাকার এডিপি নেওয়া হয়েছে।

বাস্তবায়নের হার উদ্বেগজনক

আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই-জানুয়ারি সময়ে এডিপির মাত্র ২১.৫২ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। এই সময়ে ৫৯ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা খরচ হয়েছে, যা গতবার একই সময়ে খরচের পরিমাণের তুলনায় কম। গত বছর একই সময়ে খরচ হয়েছিল ৭৪ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা।

এর আগে, কোভিড-১৯ এর সময় (২০২০-২১ অর্থবছর) জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ৬১ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। পরবর্তী দুই বছরে প্রায় ৭২ হাজার কোটি টাকা করে খরচ হয়েছে।

ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ

এখন প্রশ্ন হলো, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য মন্ত্রণালয়গুলো কীভাবে তাদের বরাদ্দের অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার করবে? সরকারের উচিত হবে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া, যাতে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা যায় এবং দেশের উন্নয়ন কার্যক্রমে গতি আনা যায়।

এখন সময় এসেছে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জন্য একটি কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণের, যাতে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয় এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button