বিশ্ব

নেপালের নিরাপত্তার নিয়ন্ত্রণ নিলো সেনাবাহিনী

নেপালে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি পদত্যাগের পর দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সহিংস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী দায়িত্ব নিয়েছে। মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে সেনারা রাজধানী কাঠমান্ডুসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান নেন।

সেনাবাহিনীর দায়িত্ব গ্রহণ

প্রধান সেনাপ্রধান জেনারেল অশোক রাজ সিগদেল জাতির উদ্দেশে ভাষণে শান্ত থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী দেশের নিরাপত্তা বজায় রাখতে এবং সহিংসতা রোধে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। সেনারা পার্লামেন্ট ভবন, সুপ্রিম কোর্ট, সিংহদরবার প্রাঙ্গণসহ সরকারি দপ্তর ও শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের বাসভবনে অবস্থান নিয়েছে।

সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি সমাধানের জন্য তারা সরকারের সঙ্গে সমন্বয় বজায় রাখবে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সহিংসতার প্রেক্ষাপট

নেপালে সহিংস বিক্ষোভ শুরু হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা জারির প্রতিবাদ থেকে। এরপরও পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ থাকায় আন্দোলন আরও বিস্তৃত হয়। শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে বিভিন্ন স্লোগান দেয় যেমন ‘ছাত্রদের হত্যা কোরো না’, ‘দুর্নীতিবাজ নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নাও’।

সহিংসতায় অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দিউবা ও তার স্ত্রী বিক্ষোভকারীদের হামলায় আহত হন। সেনাবাহিনী গিয়ে দিউবাকে উদ্ধার করে। অপর সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঝালনাথ খানালের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তার স্ত্রী রাজ্যলক্ষ্মী চিত্রকর দগ্ধ হয়ে মারা যান।

প্রধানমন্ত্রী অলি পদত্যাগ

৭৩ বছর বয়সী প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাউডেলের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। পদত্যাগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, ‘অসাধারণ পরিস্থিতির কারণে’ তিনি দায়িত্ব থেকে সরে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগের পর দেশের রাজনৈতিক শূন্যতা এবং অস্থিরতা আরও প্রকট হয়ে ওঠে।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

নেপালের রাজনৈতিক অস্থিরতার মূল কারণ হিসেবে গণমাধ্যম ও বিশ্লেষকরা সরকারের দুর্নীতি, ব্যর্থ প্রশাসন এবং সামাজিক অসন্তোষকে উল্লেখ করছেন। এর আগে নেপালে শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণ সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছিল।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সেনাবাহিনী দায়িত্ব নেওয়ায় অন্তত সাময়িকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে। তবে দীর্ঘমেয়াদে রাজনৈতিক সমাধান ছাড়া দেশের অস্থিরতা কমবে না।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

নেপালের সাম্প্রতিক সহিংসতা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। প্রতিবেশী দেশ ভারত এবং চীন নেপালের স্থিতিশীলতার প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোও সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রতি সতর্ক থাকতে বলেছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ এবং সেনাবাহিনীর পর্যবেক্ষণ পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

সেনাবাহিনীর চ্যালেঞ্জ

সেনাবাহিনী বর্তমানে যে প্রধান চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি তা হলো সহিংস পরিস্থিতি আরও অবনতির হাত থেকে রক্ষা করা। রাজধানী কাঠমান্ডু ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আন্দোলন চলমান। সেনাবাহিনীকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সতর্কতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে, যাতে সাধারণ জনগণ নিরাপদ থাকে।

নেপালের রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়ে সেনাবাহিনী দায়িত্ব নেওয়ায় অন্তত সাময়িকভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। তবে দেশের স্থিতিশীলতার জন্য রাজনৈতিক সংলাপ এবং সমাধান অপরিহার্য। বিশ্লেষকরা বলছেন, সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখলেও ভবিষ্যতের চূড়ান্ত স্থিতিশীলতা নির্ভর করবে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এবং জনগণের অংশগ্রহণের ওপর।

এম আর এম – ১২৬৫,Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button