অর্থনীতি

লিলিসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্য নকল: অসাধু ব্যবসায়ীকে জরিমানা

বাংলাদেশে প্রসাধনী, হোমকেয়ার ও স্কিনকেয়ার পণ্য উৎপাদনে স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান রিমার্ক-হারল্যানের লিলি ব্র্যান্ডসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নকল পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করার দায়ে এক অসাধু ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়েছে। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)-এর পরিচালিত মোবাইল কোর্ট এই অভিযান পরিচালনা করে।

নকল পণ্য তৈরির অভিযোগ ও অভিযান

বিএসটিআইয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার দনিয়ার মাদ্রাসা রোডে মায়ের দোয়া কনজ্যুমার ইন্ডাস্ট্রিজ নামক একটি প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে প্রসাধনী ও গৃহস্থালী পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করছিল। লিলিসহ আরও কিছু জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের পণ্য নকল করে বাজারজাত করা হচ্ছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে বিএসটিআই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাবেকুন নাহারের নেতৃত্বে একটি দল সেখানে অভিযান চালায়।

অভিযানকালে বিএসটিআই-এর কর্মকর্তারা বিভিন্ন নকল পণ্য জব্দ করেন এবং কারখানাটির প্রয়োজনীয় লাইসেন্স ও কাগজপত্র চেয়ে দেখতে চান। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির মালিক মিজানুর রহমান এসব কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হন। পাশাপাশি, অবৈধভাবে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নকল পণ্য উৎপাদনের বিষয়ে কোনো সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি।

অর্থদণ্ড ও কারাদণ্ড

বিএসটিআইয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মিজানুর রহমানকে এক লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের কারাদণ্ড প্রদান করেন। একই সঙ্গে, কারখানায় থাকা বিপুল পরিমাণ নকল পণ্য জব্দ ও ধ্বংস করা হয়। বিএসটিআইয়ের কর্মকর্তারা জানান, ভবিষ্যতে এ ধরনের অবৈধ কার্যকলাপ বন্ধ করতে আরও কঠোর অভিযান পরিচালনা করা হবে।

বিএসটিআইয়ের সতর্কতা ও পদক্ষেপ

বিএসটিআই-এর এক কর্মকর্তা জানান, দেশে নকল পণ্য প্রতিরোধে এ ধরনের অভিযান নিয়মিত পরিচালিত হবে। গ্রাহকদের সুরক্ষায় বিএসটিআই নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করছে এবং নকল পণ্য উৎপাদন ও বিপণন বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত থাকবে। সাধারণ ক্রেতাদের সতর্ক থেকে অনুমোদিত ও নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য কেনার আহ্বান জানানো হয়েছে।

ভুক্তভোগী ব্র্যান্ডের প্রতিক্রিয়া

নকল পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত বন্ধে বিএসটিআইয়ের এই কার্যক্রমকে স্বাগত জানিয়েছেন লিলি ব্র্যান্ডের পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রিমার্ক-হারল্যানের পরিচালক ও জনপ্রিয় চিত্রনায়ক শাকিব খান। তিনি বলেন, ‘জনগণকে আসল ও নিরাপদ পণ্য পৌঁছে দিতে আমরা নিরলসভাবে কাজ করছি। কিছু অসাধু চক্র নকল ও মানহীন পণ্য বাজারজাতের চেষ্টা করছিল। বিএসটিআই তা সফলভাবে প্রতিহত করেছে।’

নকল পণ্য কেন বিপজ্জনক?

বাজারে নকল পণ্যের বিস্তার শুধু ভোক্তাদের জন্য নয়, বরং দেশীয় বৈধ ব্যবসায়ীদের জন্যও বড় একটি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব নকল প্রসাধনী ও স্কিনকেয়ার পণ্য ত্বকের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদানযুক্ত হতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। পাশাপাশি, হোমকেয়ার পণ্যগুলোর গুণগত মান নিশ্চিত না থাকায় তা ব্যবহারে নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিতে পারে।

ক্রেতাদের জন্য পরামর্শ

১. পণ্য কেনার সময় বিএসটিআই অনুমোদিত লোগো আছে কি না, তা নিশ্চিত করুন। ২. বিশ্বস্ত ও নামকরা ব্র্যান্ডের পণ্য কেনার চেষ্টা করুন। ৩. অস্বাভাবিক কম দামে বিক্রি হওয়া পণ্য কেনার আগে তা যাচাই করে নিন। ৪. পণ্যের গায়ে উল্লিখিত উপাদান, উৎপাদন তারিখ ও মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ পরীক্ষা করুন। ৫. নকল পণ্য চিহ্নিত হলে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানান।

আইনি ব্যবস্থা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

বিএসটিআই জানিয়েছে, বাজারে নকল পণ্য উৎপাদন ও বিপণন রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হবে। বিশেষ করে যেসব প্রতিষ্ঠান অনুমোদনবিহীনভাবে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্য উৎপাদন করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভোক্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং বাজারে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে বিএসটিআই আরও কঠোর হবে।

উপসংহার

নকল পণ্য শুধু নির্দিষ্ট কোনো ব্র্যান্ডের জন্য ক্ষতিকর নয়, এটি সমগ্র ভোক্তা সমাজের জন্য হুমকি। নকল ও নিম্নমানের পণ্য থেকে রক্ষা পেতে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং আইনি ব্যবস্থা জোরদার করা জরুরি। বিএসটিআইয়ের এ ধরনের অভিযান দেশীয় শিল্পের সুরক্ষা ও গ্রাহকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতে এ ধরনের কঠোর পদক্ষেপ আরও বৃদ্ধি পেলে বাজারে নকল পণ্যের সংখ্যা কমে আসবে বলে আশা করা যায়।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button