বিজিএমইএর প্রশাসকের মেয়াদ বাড়ল চার মাস

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)-এর প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা মো. আনোয়ার হোসেনের মেয়াদ আরও চার মাস বাড়িয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ১৬ জুন পর্যন্ত তিনি প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করবেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগ গত সপ্তাহে এ বিষয়ে অফিস আদেশ জারি করে। গত বছরের ২০ অক্টোবর প্রশাসকের দায়িত্ব গ্রহণ করা আনোয়ার হোসেন বর্তমানে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রশাসকের মেয়াদ বৃদ্ধির কারণ
প্রশাসকের মেয়াদ বৃদ্ধির পেছনে মূল কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, বিজিএমইএ-র পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, সংগঠনের নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করা হলেও অনাকাঙ্ক্ষিত বিভিন্ন কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। তাই প্রশাসক আনোয়ার হোসেন মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করেন, যা পর্যালোচনা করে মন্ত্রণালয় আরও চার মাস মেয়াদ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
শর্তসাপেক্ষে মেয়াদ বৃদ্ধি
নতুন মেয়াদ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে দুটি শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে—
১. বিজিএমইএর সংঘস্মারক ও সংঘবিধি অনুসারে পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন করতে হবে।
২. বর্ধিত মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৫ দিন আগে নির্বাচন সম্পন্ন করে নির্বাচিত পরিচালনা পর্ষদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে হবে।
বিজিএমইএ-তে দ্বন্দ্ব ও প্রশাসক নিয়োগের পটভূমি
বিজিএমইএর নির্বাচন কেন্দ্রিক দুই প্রধান জোট হলো ‘সম্মিলিত পরিষদ’ ও ‘ফোরাম’। গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ফোরাম নেতারা বিজিএমইএর সভাপতিসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের পদত্যাগের দাবি তোলেন। ৭ আগস্ট পর্ষদের ওপর অনাস্থা জানিয়ে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির কাছে স্মারকলিপি দেন তাঁরা। এ সময় সংগঠনের মধ্যে তীব্র মতবিরোধ দেখা দেয়, যা সংঘর্ষ পর্যন্ত গড়ায়।
এরপর, ১৯ আগস্ট ফোরাম নেতারা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগের মহাপরিচালকের কাছে চিঠি দিয়ে পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার দাবি জানান। দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর গত বছরের ২০ অক্টোবর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিজিএমইএর পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত ঘোষণা করে এবং ১২০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করে নতুন পর্ষদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের শর্তে প্রশাসক নিয়োগ দেয়।
পর্ষদ বিলুপ্তির কারণ
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন-২ শাখার মতে, বিজিএমইএর তৎকালীন সভাপতি এস এম মান্নান ২৪ আগস্ট পদত্যাগ করলে, সংগঠনের পর্ষদ পুনর্গঠন করা হলেও তা যথাযথ ছিল না। এছাড়া, তৈরি পোশাক শিল্পের সাম্প্রতিক অস্থিরতা ও শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে পর্ষদ কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়। এসব কারণেই মন্ত্রণালয় পর্ষদ ভেঙে দিয়ে প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়।
বিজিএমইএ-র রাজনৈতিক প্রভাব ও নির্বাচনী পরিস্থিতি
গত ১৫ বছরে একবার ছাড়া সব সময়েই বিজিএমইএর নেতৃত্বে ছিল ‘সম্মিলিত পরিষদ’। এই জোটের নেতৃত্বে ছিলেন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদী ও শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। এছাড়া আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমানও এই জোটের অন্যতম নেতা।
২০২৪ সালের মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত বিজিএমইএ নির্বাচনে ‘সম্মিলিত পরিষদ’ সবকটি পদে বিজয়ী হয় এবং সভাপতি নির্বাচিত হন এস এম মান্নান। তবে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর থেকে তিনি আর প্রকাশ্যে আসেননি। তার বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলাও রয়েছে বলে জানা গেছে।
আগামী নির্বাচনের সম্ভাবনা ও প্রশাসকের ভূমিকা
প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেনের মেয়াদ বাড়ানোর পরিপ্রেক্ষিতে আগামী চার মাসের মধ্যে বিজিএমইএ-র নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে তৎপর হতে হবে। বিজিএমইএ-র প্রশাসক হিসেবে তিনি নির্বাচনী প্রস্তুতি ও সদস্যদের মধ্যে ঐক্য ফেরানোর জন্য কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন।
বিজিএমইএ-র ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে দুই জোটের মধ্যে এখনও দ্বন্দ্ব রয়েছে। যদিও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে যে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করেই নতুন নেতৃত্বকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে হবে। বিজিএমইএ-র সদস্যরা আশাবাদী যে, এই প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হবে।