প্রবৃদ্ধি নয়, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে জোর: নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা

বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে, যেখানে প্রবৃদ্ধির চেয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এই নীতির আওতায় দেশের অর্থনীতির প্রধান চারটি চ্যালেঞ্জ হলো: মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা, রিজার্ভ বৃদ্ধি এবং ব্যাংকের প্রতি আমানতকারীদের আস্থা বৃদ্ধি।
সরকারি খাতে ঋণ কমবে
নতুন মুদ্রানীতিতে সরকারি খাতে ঋণ কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরে সরকারের ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ৯৯ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে।
বেসরকারি খাতে ঋণ বাড়বে
বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ৯ দশমিক ৮ শতাংশ ধরা হয়েছে। গত ডিসেম্বর শেষে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। নতুন নীতির আওতায় সরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ১৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে, যা আগে ছিল ১৮ দশমিক ১ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্য
বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭-৮ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। গভর্নর আহসান এইচ মনসুর সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “বর্তমানে আমাদের প্রধান লক্ষ্য মূল্যস্ফীতি কমানো। তাই জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে খুব বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে না।”
নীতি সুদহার অপরিবর্তিত
নতুন মুদ্রানীতিতে সব ধরনের নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। অর্থাৎ, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর নেওয়া ঋণের সুদ ১০ শতাংশে থাকবে। গত দুই মাসে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে আসায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
খেলাপি ঋণ কমানোর উদ্যোগ
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, দেশে খেলাপি ঋণের হার ৩০ শতাংশ অতিক্রম করতে পারে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যাংকিং খাতের সুশাসন নিশ্চিত করা এবং যথাযথ সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হবে।
অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা
বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে, কঠোর নীতির ধারাবাহিকতা ও অংশীজনদের সহযোগিতায় নিকট ভবিষ্যতে মূল্যস্ফীতি ৭-৮ শতাংশে নেমে আসবে। সর্বশেষ জানুয়ারিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে নেমেছে।
নতুন মুদ্রানীতি দেশের অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে জোর দেওয়ার মাধ্যমে সরকার দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে চায়। এই নীতির সফল বাস্তবায়ন হলে দেশের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা উন্নত হবে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আরও ত্বরান্বিত হবে।