বেনাপোল দিয়ে তিন দিনে এলো ১৭৫ ট্রাক ফল, কমতে শুরু করেছে দাম

ধর্মঘট শেষে সচল বেনাপোল স্থলবন্দর
ধর্মঘটের পর বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে গত তিন দিনে ভারত থেকে ১৭৫ ট্রাক ফল আমদানি হয়েছে, যার ফলে বাজারে ফলের দাম কমতে শুরু করেছে। ধর্মঘটের কারণে আমদানি বন্ধ থাকলেও এখন আবার বন্দরে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানি বন্ধ থাকায় বাজারে ফলের দাম বেড়ে গিয়েছিল, তবে নতুন চালান আসার ফলে দাম আবার স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।
গত বৃহস্পতিবার, শনিবার এবং রবিবার ভারত থেকে আমদানি হওয়া এসব ফলের মধ্যে রয়েছে আপেল, কমলা, আঙুর, ডালিম ও নাশপাতি। ব্যবসায়ীদের মতে, আমদানির পরিমাণ বাড়লে বাজারে ফলের দাম আরও কমতে পারে।
ধর্মঘটের কারণ ও প্রভাব
এর আগে, অতিরিক্ত শুল্ক প্রত্যাহারের দাবিতে ‘বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন’ ২৯ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ধর্মঘটের ডাক দেয়। এর ফলে গত ৬ ও ৭ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার ও বুধবার) বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে কোনো ফল আমদানি হয়নি।
ফল আমদানি বন্ধ থাকার কারণে ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হন। একইসঙ্গে, সরকারও প্রায় ৫০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়। সাধারণ ক্রেতারাও এতে ভোগান্তির শিকার হন, কারণ আমদানিকৃত ফলের দাম বেড়ে গিয়েছিল।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ (ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং) এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান জানান, “আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। সরকার যদি ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বর্ধিত ১০ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার না করে, তাহলে ব্যবসায়ীরা আবারও অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দিতে পারেন।”
বেনাপোল স্থলবন্দরের বর্তমান অবস্থা
ধর্মঘট প্রত্যাহারের পর বেনাপোল বন্দরে এখন আবার ব্যস্ততা ফিরে এসেছে। প্রতিদিন প্রায় ১০০টি ট্রাক ফল আমদানি হলেও ধর্মঘটের কারণে দুই দিন আমদানি বন্ধ থাকায় অনেক ব্যবসায়ী ক্ষতির মুখে পড়েন।
আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, বেনাপোল দিয়ে ফল আমদানি সচল থাকলে দেশজুড়ে সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে এবং ভোক্তাদের জন্য দাম সহনীয় হবে। বন্দর সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, সরকার শুল্ক সংক্রান্ত বিষয়ে ইতোমধ্যে আলোচনা শুরু করেছে, তবে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
বেনাপোল কাস্টমস হাউস সূত্রে জানা গেছে:
- প্রতিদিন গড়ে ৮০-১০০ ট্রাক ফল আমদানি হয়ে থাকে।
- আমদানির ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
- শুল্ক প্রত্যাহার না হলে আগামীতে আবারও ধর্মঘট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ফল আমদানির ভবিষ্যৎ ও বাজারের সম্ভাব্য অবস্থা
ফল আমদানি বাড়লে বাজারে ফলের দাম আরও কমতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। ধর্মঘটের কারণে গত সপ্তাহে আমদানি বন্ধ থাকায় আপেল, কমলা, ডালিমসহ অন্যান্য আমদানিকৃত ফলের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গিয়েছিল।
বর্তমানে বাজারে ফলের দাম কমতে শুরু করেছে, তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, “পরবর্তী কয়েক দিনে আমদানি আরও বৃদ্ধি পেলে ফলের দাম পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে পারে।”
শুল্ক নিয়ে ব্যবসায়ীদের দাবি ও সরকারের অবস্থান
ব্যবসায়ীদের দাবি, আমদানিকৃত ফলের ওপর থেকে অতিরিক্ত শুল্ক প্রত্যাহার করা হোক। তারা বলছেন, অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ফলে ব্যবসায়ীরা যেমন ক্ষতির মুখে পড়ছেন, তেমনি সাধারণ ক্রেতারাও চড়া দামে ফল কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।
অন্যদিকে, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, শুল্কনীতি পুনর্বিবেচনার জন্য আলোচনা চলছে। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে নেওয়া হবে কিনা, তা এখনো নিশ্চিত নয়।
ব্যবসায়ীদের বক্তব্য:
- আমদানিকৃত ফলের শুল্ক কমাতে হবে।
- ক্রেতাদের জন্য ন্যায্যমূল্যে ফল সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
- ধর্মঘট এড়াতে সরকারের উচিত দ্রুত সমাধান বের করা।
সাধারণ ভোক্তাদের প্রতিক্রিয়া
ফলের দাম কমতে শুরু করায় সাধারণ ভোক্তারা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আপেলের দাম প্রতি কেজি ২০-৩০ টাকা কমেছে, কমলার দামও কিছুটা কমেছে।
ঢাকার এক ক্রেতা জানান, “গত সপ্তাহে আপেলের দাম অনেক বেড়ে গিয়েছিল। এখন কিছুটা কমেছে, তবে আরও কমলে ভালো হয়।”
উপসংহার
বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ফল আমদানি শুরু হওয়ায় বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে শুল্ক নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকায় ব্যবসায়ীরা এখনও উদ্বিগ্ন। সরকারের উচিত দ্রুত এ সমস্যা সমাধান করা, যাতে আমদানি স্বাভাবিক থাকে এবং সাধারণ মানুষ স্বল্পমূল্যে ফল কিনতে পারে।