অর্থনীতি

দাম বাড়ল ভোজ্যতেলের, বোতলজাত সয়াবিন লিটারে ৬ টাকা বেড়ে ১৯৫ টাকা

Advertisement

দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের দাম আবারও বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলে ৬ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেলে ৭ টাকা দাম বাড়ানো হয়েছে। এই মূল্যবৃদ্ধির ফলে পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৩৩ টাকা বেড়ে ৯৫৫ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটারে ৭ টাকা বেড়ে ১৭৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন রোববার (৭ ডিসেম্বর) সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই তথ্য জানিয়েছে। এই নতুন মূল্য সোমবার (৮ ডিসেম্বর) থেকে কার্যকর হবে। ব্যবসায়ীদের দাবি, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই এই মূল্য সমন্বয় করা হয়েছে। তবে ভোক্তা অধিকার সংগঠনগুলো বলছে, সরকারের অনুমতি ছাড়াই এভাবে দাম বাড়ানো চরম অন্যায়

নতুন দাম ঘোষণা: লিটারে কত বাড়ল?

বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক জারি করা বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ভোজ্যতেলের নতুন দাম নিম্নরূপ:

পণ্যের ধরনপূর্বের দাম (আনুমানিক)দাম বৃদ্ধিনতুন দাম (প্রতি ইউনিট)
বোতলজাত সয়াবিন (১ লিটার)১৮৯ টাকা৬ টাকা১৯৫ টাকা
খোলা সয়াবিন (১ লিটার)১৬৯ টাকা৭ টাকা১৭৬ টাকা
বোতলজাত সয়াবিন (৫ লিটার)৯২২ টাকা৩৩ টাকা৯৫৫ টাকা
খোলা পাম তেল (১ লিটার)১৫০ টাকা১৬ টাকা১৬৬ টাকা

এই মূল্যবৃদ্ধি সোমবার থেকে কার্যকর হবে, যা সাধারণ ভোক্তাদের জীবনযাত্রার ব্যয়ের ওপর নতুন করে চাপ সৃষ্টি করবে।

দাম সমন্বয়ের কারণ: আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব

বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন দাবি করেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই নতুন মূল্য সমন্বয় করা হয়েছে।

ব্যবসায়ীদের যুক্তি:

বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধি: কোম্পানিগুলো বলছে, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়ছে, তাই দাম বাড়ানো আবশ্যক।

আইনের অনুসরণ: ব্যবসায়ীরা বলছেন, কন্ট্রোল অব অ্যাসেনসিয়াল কমোডিটিস অ্যাক্ট-১৯৫৬ অনুসারে এবং অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিপণন ও পরিবেশক নিয়োগ আদেশ-২০১১ অনুযায়ী, উৎপাদক বা আমদানিকারক অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের মূল্য যৌক্তিকভাবে হ্রাস, বৃদ্ধি বা পুনর্নির্ধারণ করতে হলে সংশ্লিষ্ট পণ্যের ব্যবসায়ী সমিতির মাধ্যমে ১৫ দিন আগে সরকারকে জানাতে হবে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই আদেশ অনুসারেই তারা দাম বাড়িয়েছেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ক্যাবের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য

দাম বৃদ্ধি নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ভোক্তা অধিকার সংগঠনগুলোর মধ্যে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য তৈরি হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অবস্থান: বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান (পূর্বের ঘটনায়) বলেছিলেন, ব্যবসায়ীরা আবেদন করেছেন, কিন্তু দাম বাড়ানোর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি। সরকারের অনুমতি ছাড়া কীভাবে দাম বাড়ানো হলো, সে বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হবে।

ক্যাব-এর সমালোচনা: কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি এএইচএম সফিকুজ্জামান মন্তব্য করেন, সরকারের অনুমতি ছাড়া এভাবে দাম বাড়িয়ে ভোক্তার কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ নেওয়া ‘অবশ্যই অন্যায়’। তিনি বলেন, ‘আগাম ঘোষণা ছাড়া এভাবে কূটকৌশলে দাম বাড়ানো চরম অন্যায়। সরকারের সংশ্লিষ্টদের উচিত বিষয়টি খতিয়ে দেখা।’

গত অক্টোবরেও সরকারের অনুমতি ছাড়া ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়েছিল কোম্পানিগুলো, তখন বাণিজ্য উপদেষ্টা সাফ জানিয়ে দেন, এভাবে দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই। পরে দর বাড়ানো থেকে সরে এসেছিলেন ব্যবসায়ীরা। এবারও মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ছাড়াই দাম বাড়ানোর বিষয়টি বাজারের অস্থিরতা ও নিয়ন্ত্রণহীনতা প্রমাণ করে।

ভোক্তাদের ওপর প্রভাব ও বাজারে অস্থিরতা

ভোজ্যতেলের এই মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ ক্রেতাদের জীবনযাত্রায় সরাসরি আঘাত হানছে। তেল রান্নার একটি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হওয়ায় এর দাম বাড়লে অন্যান্য পণ্যের দামও বাড়ার আশঙ্কা থাকে।

ক্রেতাদের হতাশা: বেসরকারি চাকরিজীবী রনি তালুকদার জানান, তিনি নতুন বাড়তি দরের তেল বাজারে দেখতে পাচ্ছেন।

বাজারের চিত্র: রাজধানীর কাঁঠালবাগান, কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুরসহ কয়েকটি বাজারে রূপচাঁদা, তীর, পুষ্টি, ফ্রেশসহ প্রায় সব ব্র্যান্ডের বোতলজাত সয়াবিন তেল বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। এক ও দুই লিটারের নতুন দরের বোতল এখনও পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ না হওয়ায় খুচরা বিক্রেতারাও বেশি দামে বিক্রি করছেন।

এই অস্থিরতা সামনে রমজান মাসকে কেন্দ্র করে আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ক্যাব সভাপতি। রমজানে সরবরাহে যাতে ঘাটতি না হয়, সরকারকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

সরকারের নজরদারি জরুরি

ভোজ্যতেলের দাম সমন্বয়ের নামে লিটারপ্রতি ৬ থেকে ৭ টাকা বৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জন্য চরম উদ্বেগজনক। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষার ব্যবসায়িক যুক্তি থাকলেও, সরকারের অনুমতি ছাড়া দাম বাড়ানো আইনের লঙ্ঘন এবং বাজার কারসাজির ইঙ্গিত দেয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উচিত হবে দ্রুত এই মূল্যবৃদ্ধির কারণ খতিয়ে দেখা, ব্যবসায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা এবং বাজার তদারকি জোরদার করা। অন্যথায়, এই ধরনের ধারাবাহিক মূল্যবৃদ্ধি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ও জনজীবনকে আরও চাপের মুখে ফেলবে।

এম আর এম – ২৫৩০, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button