অর্থনীতি

বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজারের চার দিনের ঢাকা সফর

বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজার চার দিনের সরকারি সফরে বাংলাদেশে এসেছেন। শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) তিনি ঢাকায় পৌঁছান। তার সফরকালে বাংলাদেশের অর্থনীতি, অবকাঠামো উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হবে।

বিশ্বব্যাংকের ভূমিকা ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে বিশ্বব্যাংক দেশের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশকে ৪ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সংস্থাটি। এই তহবিল দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং দারিদ্র্য বিমোচনে ব্যয় হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের সমৃদ্ধিবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট পাবলো সাভেদ্রাও এ সফরে মার্টিন রাইজারের সঙ্গে রয়েছেন। তাদের সফরসূচি অনুযায়ী, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, জ্বালানি উপদেষ্টা এম ফাওজুল কবির খান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরসহ অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা এবং বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তারা।

সফরের মূল আলোচ্য বিষয়

বিশ্বব্যাংকের এই সফরে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনার জন্য নির্ধারিত হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম:

  1. অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও প্রবৃদ্ধি: বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং চ্যালেঞ্জ পর্যালোচনা করবে। বিশেষ করে কোভিড-১৯ পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের বিষয়ে আলোচনা হবে।
  2. জ্বালানি ও অবকাঠামো উন্নয়ন: বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো খাতের টেকসই উন্নয়নের জন্য নতুন প্রকল্প ও সহায়তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
  3. দারিদ্র্য বিমোচন ও মানব উন্নয়ন: দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির কার্যকারিতা পর্যালোচনা করা হবে।
  4. জলবায়ু পরিবর্তন ও টেকসই উন্নয়ন: বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা এবং টেকসই উন্নয়ন কৌশল নিয়ে বিশ্বব্যাংক কীভাবে সহায়তা করতে পারে, তা আলোচনা করা হবে।

বাংলাদেশ-বিশ্বব্যাংক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ

বিশ্বব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন সহযোগী। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই সংস্থা বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা খাত, দারিদ্র্য বিমোচন, এবং কৃষিখাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বিশেষ করে পদ্মা সেতু, ঢাকা মহানগরী পরিবহন ব্যবস্থা, ও মেগা প্রকল্পে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য।

বিশ্বব্যাংকের এই সফরের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ বিনিয়োগের ক্ষেত্র ও সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশ বর্তমানে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পথে রয়েছে, এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনার সম্ভাব্য ফলাফল

বিশ্বব্যাংকের এ সফর থেকে বাংলাদেশ বেশ কিছু সুবিধা লাভ করতে পারে। তার মধ্যে রয়েছে:

  • নতুন ঋণ ও অনুদান: বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য নতুন ঋণ অনুমোদন হতে পারে।
  • বিনিয়োগ ও সহযোগিতা: অবকাঠামো, জ্বালানি এবং পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের নতুন বিনিয়োগের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।
  • নীতি সহায়তা: সরকারের নীতি নির্ধারণে বিশ্বব্যাংকের গবেষণা ও কৌশলগত পরামর্শ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

উপসংহার

বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজারের এই সফর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় করণীয় নিয়ে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গৃহীত হতে পারে। এই সফর শেষে বাংলাদেশ-বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতা আরও গভীর হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button