বিশ্ব

জেরুজালেমে বন্দুকধারীর হামলায় নিহত পাঁচ

Advertisement

পূর্ব জেরুজালেমের রামত জংশনের একটি ব্যস্ত বাসস্টপে সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) বন্দুকধারীদের হামলায় পাঁচজন নিহত এবং কমপক্ষে সাতজন গুরুতর আহত হয়েছেন। স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনী হামলাকারীদের সঙ্গে গুলি বিনিময় করে তাদের প্রতিহত করেছে।

এই ঘটনা মুহূর্তে জেরুজালেম ও পশ্চিম তীরে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে এবং ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ সমস্ত চেকপয়েন্ট বন্ধ করেছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি এবং আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, এটি এলাকায় নিরাপত্তা পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি নির্দেশ করছে।

হামলার বিবরণ

ইসরায়েলি পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার সকাল বা দুপুরের দিকে রামত জংশনের ব্যস্ত বাসস্টপে দুইজন বন্দুকধারী হঠাৎ হামলা চালায়। হামলার সময় জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। হামলাকারীরা নিরাপত্তা ও বেসামরিক মানুষদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়।

স্থানীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা এবং একজন বেসামরিক ব্যক্তি হামলাকারীদের পাল্টা গুলি চালিয়ে প্রতিহত করার চেষ্টা করেন। এই গুলি বিনিময় এবং হামলার সময়ই পাঁচজন নিহত হন। ইসরায়েলের ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম এম্বুলেন্স সার্ভিস জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে তিনজন পুরুষ, একজন ৫০ বছর বয়সী মহিলা এবং একই বয়সী এক পুরুষ রয়েছেন। আহত নয়জনকে দ্রুত স্থানীয় হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

আক্রান্তদের অবস্থা

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আহতদের চিকিৎসা এবং গুলির কারণে সৃষ্ট চোটের জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের টিম তৈরি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে অনেকে যুগল পরিবার এবং স্থানীয় ব্যবসায়ী ছিলেন।

হামলার পর স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কে বাসস্টপ থেকে সরে যায়। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সীমান্ত পরিস্থিতি

হামলার পর ইসরায়েলি সরকার পুর্ব জেরুজালেম এবং পশ্চিম তীরের সব চেকপয়েন্ট বন্ধ করে দেয়। এটি মূলত নিশ্চিত করতে যে হামলাকারীরা পালাতে না পারে এবং নিরাপত্তা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে।

পুলিশ জানিয়েছে, তারা দ্রুত হামলাকারীদের সনাক্ত এবং গ্রেফতার করার চেষ্টা করছে। এছাড়া, পুলিশ এলাকার আশেপাশে অতিরিক্ত নিরাপত্তা জোরদার করেছে এবং জনগণকে অপ্রয়োজনীয়ভাবে বাইরে না বের হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

আল জাজিরা এবং বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ধরনের সহিংসতা অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক মহলে নিন্দার স্বর প্রকাশ করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশ ইসরায়েলকে নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অনুরোধ করেছে।

সংযুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সহ বিভিন্ন দেশ থেকে কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে শান্তি ও সংযম বজায় রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের হামলা প্রাদেশিক উত্তেজনা বাড়াতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

পূর্ব ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট

পূর্ব জেরুজালেম এবং পশ্চিম তীর এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় উত্তেজনা বিদ্যমান। এই অঞ্চলে প্রায়ই সামান্য প্ররোচনা থেকে সহিংসতা ছড়ায়।

গত কয়েক বছরে, এই এলাকায় সন্ত্রাসী হামলা, গুলিবিনিময় এবং বেসামরিক হতাহতের ঘটনা কয়েকবার ঘটেছে। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, স্থানীয় সমস্যা সমাধান ছাড়া এই ধরনের ঘটনা পুনরায় ঘটতে পারে।

ইসরায়েলি পুলিশের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তারা নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করার পরিকল্পনা নিয়েছে এবং জনগণকে সচেতন থাকার জন্য পরামর্শ দিচ্ছে।

নাগরিকদের প্রতিক্রিয়া

স্থানীয় বাসিন্দারা হামলার পর আতঙ্কে রয়েছেন। অনেকেই বলেন, তারা প্রতিদিনের জীবনে নিরাপত্তাহীনতার কারণে উদ্বিগ্ন। সামাজিক মাধ্যমে মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং প্রশাসনের প্রতি কার্যকর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলেন, এ ধরনের সহিংসতা তাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য বাধা সৃষ্টি করে।

বিশ্লেষক মন্তব্য

নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের হামলা রাজনৈতিক ও ধর্মীয় উত্তেজনার প্রভাবে সংঘটিত হয়। বিশেষ করে পূর্ব জেরুজালেমের মতো সংবেদনশীল অঞ্চলে সামান্য প্ররোচনাও বড় ধরনের সহিংসতা সৃষ্টি করতে পারে।

বিশ্লেষকরা আরও বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের শান্তির প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে এই ধরনের ঘটনা বাড়তে পারে এবং বৃহত্তর সংঘর্ষের আশঙ্কা তৈরি করতে পারে।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন

বিবিসি জানিয়েছে, হামলার পর ইসরায়েলি সেনারা এলাকায় সেনা মোতায়েন করেছে এবং আশেপাশের এলাকার জনগণকে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়েছে।

আল জাজিরা জানিয়েছে, হামলাকারীরা স্থানীয় বাসিন্দাদের লক্ষ্য করেছিল এবং এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হামলা হতে পারে। তবে, এখন পর্যন্ত হামলাকারীদের পরিচয় নিশ্চিত হয়নি।

প্রতিকারের পরিকল্পনা

ইসরায়েলি সরকার ইতিমধ্যেই বলেছে, তারা নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করবে এবং হামলাকারীদের শনাক্ত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করবে।

স্থানীয় নাগরিকরা আশ্বাস চাচ্ছেন, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধ করা যায় এবং সাধারণ মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে।

পূর্ব জেরুজালেমের রামত জংশনে এই হামলা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। পাঁচজন নিহত এবং সাতজন আহত হওয়ার ঘটনা নিরাপত্তা ব্যবস্থার ত্রুটি ও রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রতিফলন।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ ধরনের ঘটনা শুধু স্থানীয় নয়, বরং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্যও চ্যালেঞ্জ। সুতরাং, পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করা এখন অতীব জরুরি।

MAH – 12705,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button