অস্বাস্থ্যকর ড্রামে ভোজ্য তেল ব্যবহারের প্রতিবাদে ক্যাবের মানববন্ধন
![অস্বাস্থ্যকর ড্রামে ভোজ্য তেল ব্যবহারের প্রতিবাদে ক্যাবের মানববন্ধন](https://signalbd.com/wp-content/uploads/2025/02/signal-bd-3-2-780x470.webp)
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আজ সকালে একটি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে যেখানে অস্বাস্থ্যকর, অনিরাপদ এবং ফুডগ্রেডবিহীন ড্রামে ভোজ্য তেল ব্যবহারের প্রতিবাদ জানিয়েছে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। মানববন্ধনটি শুরু হয় সকাল ১১টায়, যেখানে ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে বিভিন্ন সমাজকর্মী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বক্তব্য রাখেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন দুর্নীতিবিরোধী জাতীয় সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সারোয়ার ওয়াদুদ চৌধুরী, সাবেক যুগ্ম সচিব ও ক্যাব কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোহা. শওকত আলী খান, ক্যাব নির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল কালাম আজাদ, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আদিনা খান এবং বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ।
ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ আইন এবং জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা
বক্তারা জানান, “ভোজ্যতেল ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ আইন, ২০১৩” এবং “ভোজ্যতেল ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ বিধিমালা, ২০১৫” অনুযায়ী ভোজ্যতেলে নির্দিষ্ট মাত্রায় ভিটামিন ‘এ’ যুক্ত করা বাধ্যতামূলক। এই আইন ভঙ্গ করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এছাড়াও, ভিটামিন ‘ডি’ দ্বারা খাদ্য অণুপুষ্টি দূরীকরণের উদ্যোগ সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
ভোজ্যতেল চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন সরবরাহের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাহন, কারণ এটি দেশের প্রায় প্রতিটি পরিবারে ব্যবহৃত হয়। বক্তারা আরও বলেন, ভোজ্যতেলে সঠিক পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘ডি’ যুক্ত না থাকলে জনগণের পুষ্টিহীনতা বৃদ্ধি পেতে পারে।
খোলা ড্রামের তেলে জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি
বক্তারা উল্লেখ করেন যে, অনিরাপদ ড্রামে সংরক্ষিত তেল ব্যবহারের ফলে নানাবিধ অসুস্থতা, বিশেষত অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়ছে। এর ফলে হৃৎরোগ, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারা জানান, সংবিধানের ১৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন এবং সুরক্ষা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (SDG) এর অংশ।
আইন বাস্তবায়নে বিলম্ব এবং সরকারের দায়িত্ব
২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে অনিরাপদ, অস্বাস্থ্যকর ড্রামে ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ বন্ধের নির্দেশনা থাকলেও, কোভিড-১৯ এর কারণে এটি কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে সরকার খোলা সয়াবিন তেল ও পাম অয়েল বাজারজাতকরণের সময়সীমা বৃদ্ধি করে যথাক্রমে ৩১ জুলাই ২০২২ এবং ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত নির্ধারণ করে। কিন্তু এখনো অনেকে ফুডগ্রেডবিহীন প্যাকেজিং ব্যবহার করে তেল বাজারজাত করছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি।
বাণিজ্য উপদেষ্টার বিতর্কিত মন্তব্যের প্রতিবাদ
মানববন্ধনে বক্তারা বাণিজ্য উপদেষ্টার সাম্প্রতিক বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানান। তিনি বলেছিলেন যে খোলা এবং বোতলজাত সয়াবিন তেলের মধ্যে গুণগত পার্থক্য নেই, যা অসাধু ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করছে অনিরাপদ ড্রামে তেল বিক্রি করতে। গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের বাজারে ড্রামে বিক্রিত ৫৯% ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ নেই এবং ৩৪% তেলে সঠিক মাত্রায় ভিটামিন ‘এ’ অনুপস্থিত।
ক্যাবের দাবি
ক্যাবের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে জোর দাবি জানানো হয়েছে—
- অবিলম্বে নন-ফুড গ্রেড ড্রামে ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ বন্ধ করতে হবে।
- ফুড গ্রেড বোতল, পাউচ বা প্লাস্টিক ফয়েলে তেল বাজারজাত নিশ্চিত করতে হবে।
- ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘ডি’ সমৃদ্ধকরণের আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে।
- আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
এই মানববন্ধনের মাধ্যমে ক্যাব স্পষ্টভাবে বার্তা দিয়েছে যে, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। এ বিষয়ে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং আইন প্রয়োগের মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্ব।