নভেম্বরের প্রথম ১১ দিনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে পাঠিয়েছেন ১২৩ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স। এই পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নভেম্বরের প্রাথমিক রেমিট্যান্সের তথ্য
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, নভেম্বরের প্রথম ১১ দিনে গড়ে প্রতিদিন দেশে এসেছে ১১ কোটি ১৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স। শুধু ১১ নভেম্বর একদিনেই প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ১২ কোটি ২০ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৩৮ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫.৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
রেমিট্যান্সের বছরের হিসাব
গত কয়েক মাসে প্রবাসী আয় ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অক্টোবর ও সেপ্টেম্বর মাসে যথাক্রমে ২৫৬ কোটি ৩৪ লাখ ৮০ হাজার এবং ২৬৮ কোটি ৫৮ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার দেশে এসেছে। জুলাই এবং আগস্টে এসেছে যথাক্রমে ২৪৭ কোটি ৮০ লাখ এবং ২৪২ কোটি ১৮ লাখ ৯০ হাজার ডলার।
বিশেষভাবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ের মোট পরিমাণ ৩ হাজার ৩২ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার, যা দেশের ইতিহাসে কোনো নির্দিষ্ট অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেকর্ড।
রেমিট্যান্স বৃদ্ধির প্রভাব
প্রবাসী আয়ের এই ধারাবাহিক বৃদ্ধি দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে বৈদেশিক মুদ্রার জোগান বাড়ানো, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, এবং ব্যবসায় বিনিয়োগের সুযোগ বৃদ্ধি ইত্যাদিতে এটি সাহায্য করছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই বৃদ্ধি দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে গ্রামীণ অর্থনীতি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য এটি সহায়ক।
রেমিট্যান্সের বৃদ্ধি ও প্রবাসীদের অবদান
প্রবাসী বাংলাদেশিরা মূলত মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, ও উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন দেশে থেকে অর্থ পাঠান। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে পাঠানো অর্থের পরিমাণ বেশি। তারা বিভিন্ন উৎস থেকে দেশে অর্থ পাঠাচ্ছেন, যার মধ্যে ব্যাংক ও অনলাইন রেমিট্যান্স প্ল্যাটফর্ম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র জানান, “প্রবাসী আয় বাড়ার ফলে দেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছে। এটি বিশেষভাবে যে পরিবারের জন্য প্রেরিত অর্থ, তাদের জীবনযাত্রায় সরাসরি প্রভাব ফেলে।”
তুলনামূলক পরিসংখ্যান
গত বছরের নভেম্বরের প্রথম ১১ দিনে প্রবাসী আয় ছিল ৯০ কোটি ২০ লাখ ডলার। অর্থাৎ চলতি বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রবাসী আয়ের বৃদ্ধির হার ১৫ শতাংশের বেশি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সংরক্ষণ ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে প্রবাসী আয়ের এই ধারা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, প্রবাসী আয় বৃদ্ধির ফলে বিদেশি মুদ্রার ঘাটতি কমবে এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ সহজ হবে। এছাড়া দেশের মুদ্রার মান স্থিতিশীল রাখতে এটি সহায়ক।
একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, “প্রবাসী বাংলাদেশিরা শুধু অর্থ পাঠাচ্ছেন না, দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। যদি এই ধারা বজায় থাকে, তবে দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে।”
ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বছরের শেষ পর্যন্ত প্রবাসী আয় আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। বিশেষ করে উৎসবমুখর সময়ে প্রবাসীরা বাড়তি অর্থ পাঠানোর প্রবণতা দেখান। এভাবে দেশের মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও অভ্যন্তরীণ বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে।
নভেম্বরের প্রথম ১১ দিনে প্রবাসী আয়ের এই ধারা দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক বার্তা নিয়ে এসেছে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের অবদান দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় প্রভাব ফেলছে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই ধারা কতটা স্থায়ী হবে তা নির্ভর করছে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং অভ্যন্তরীণ নীতি প্রয়োগের ওপর।
এম আর এম – ২২০৮,Signalbd.com



