অর্থনীতি

ভ্যাটের চেয়ে বেশি হারে দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা: অর্থ উপদেষ্টা

বাংলাদেশের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ভ্যাট বৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষ চাপের মধ্যে পড়ছে। তবে কিছু প্রতিবন্ধকতার কারণে এই পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, অনেক ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা ভ্যাটের চেয়ে বেশি হারে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন। এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

ভ্যাট বৃদ্ধির উদ্দেশ্য

অর্থ উপদেষ্টা জানান, আগামী বাজেটে ভ্যাটের বিষয়টি সংশোধন করা হবে এবং তখন পূর্ণাঙ্গ সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে। তিনি বলেন, “ভ্যাট ছাড় থেকে বেরিয়ে আসা আমাদের মূল উদ্দেশ্য। অনেক খাতেই দীর্ঘদিন ধরে ভ্যাট ছাড় চলছে, যা আমরা আর উৎসাহিত করতে চাই না।” এই প্রক্রিয়ায় কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে এবং কিছু মানুষের কষ্ট হয়েছে। আপাতত সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা।

মূল্যস্ফীতি নিয়ে আলোচনা

আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে অর্থনৈতিক বিষয়–সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সালেহউদ্দিন আহমেদ। সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে আসতে কত সময় লাগতে পারে। জবাবে তিনি বলেন, “এটি আরও দু-তিন মাস সময় লাগতে পারে। নিত্যপণ্যের আমদানি অব্যাহত থাকবে। জুন মাস নাগাদ মূল্যস্ফীতি ৬ থেকে ৭ শতাংশে নেমে আসতে পারে।” তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হবে না।”

বাজেটের পরিকল্পনা

অর্থ উপদেষ্টা জানান, আগামী মার্চ মাসে সংশোধিত বাজেট দেওয়া হবে, যেখানে কিছু কাজের পরিকল্পনা থাকবে। তিনি বলেন, “যেকোনো সূচক যখন উঠতে শুরু করে, তখন তা সাধারণত মাথা নোয়াতে চায় না। শেয়ারবাজার হঠাৎ করে উঠে আবার পড়ে যেতে পারে; কিন্তু মূল্যস্ফীতির গতিপথ ভিন্ন।”

অর্থনৈতিক পরিস্থিতি

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “টাকার সরবরাহ বেশি ছিল, মানুষের হাতে টাকাও বেশি ছিল, সরবরাহ ব্যবস্থায় সমস্যা ছিল—এসব কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।” তিনি উল্লেখ করেন, কিছু অর্থনৈতিক কারণেও মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পায়।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ

সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধিতে আমদানির ব্যবস্থা করছে। তিনি জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে বিদেশি মুদ্রার সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। সরকার চাল, ডাল, সয়াবিন তেলসহ বিভিন্ন পণ্যের সরবরাহ কোনোভাবেই কমতে দেবে না।

ব্যাংকিং খাতের সমস্যা

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “যেভাবে ব্যাংকসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে অর্থ চুরি হয়েছে, তাতে এসব ব্যবস্থা না নিলে বাংলাদেশ অকল্পনীয় পর্যায়ে চলে যেত।” তিনি উল্লেখ করেন, “এখন মাত্র ১২টি ব্যাংক কার্যকরভাবে কাজ করছে, বাকিগুলো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। এই অবস্থার মধ্যে সরকার অর্থ সংস্থানের চেষ্টা করছে।”

সরকারের উদ্যোগ

অর্থ উপদেষ্টা জানান, সরকার বিশেষ তহবিল করে কীভাবে ঋণপ্রবাহ বাড়ানো যায়, বিশেষ করে সিএমএসএমই খাতে ঋণ বৃদ্ধি করা যায়, সেই চেষ্টা করছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, এই পদক্ষেপগুলো দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে সহায়তা করবে।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বর্তমানে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। ভ্যাট বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ বাড়ছে, তবে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং পরিকল্পনা আশা জাগাচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, এই উদ্যোগগুলো দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে সাহায্য করবে এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button