চলতি অক্টোবর মাসের প্রথম ২৮ দিনে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন প্রায় ২৩৪ কোটি মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এটি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২১ কোটি ডলার বেশি। অর্থাৎ, প্রবাসী আয় বছরে প্রায় ১০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী বুধবার (২৯ অক্টোবর) সাংবাদিকদের জানান, অক্টোবরের প্রথম ২৮ দিনে দেশে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৮ কোটি ৩৫ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।
মাসভিত্তিক রেমিট্যান্স প্রবাহ
চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে অক্টোবর ২৮ পর্যন্ত দেশে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ৯৯২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। জুলাই মাসে প্রবাসী আয় ছিল ২৪৭ কোটি ৭৮ লাখ ডলার, আগস্টে ২৪২ কোটি ১৯ লাখ এবং সেপ্টেম্বরে ২৬৮ কোটি ৫৮ লাখ ডলার।
এই হিসেবে দেখা যায়, অক্টোবর মাসের প্রবাসী আয় ইতিমধ্যেই গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স প্রবাহের বৃদ্ধি দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভকে আরও শক্তিশালী করেছে।
অর্থনৈতিক প্রভাব
প্রবাসী রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ বৃদ্ধি, বিনিয়োগ সক্ষমতা উন্নয়ন এবং অভ্যন্তরীণ বাজারে নগদ প্রবাহ বৃদ্ধি করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলতি অর্থবছরের রেমিট্যান্স প্রবাহ দেশের মোট জিডিপির জন্য ইতিবাচক সংকেত।
রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ফলে আমদানি নির্ভরতা কমে এবং স্থানীয় বাজারে পণ্য ও সেবার খরচ সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি, প্রবাসী আয়ের বৃদ্ধি দেশের মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করছে।
প্রবাসীরা মূলত মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, এবং উত্তর আমেরিকার দেশগুলো থেকে দেশে অর্থ পাঠাচ্ছেন। এই রেমিট্যান্সের বড় অংশ আসে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৬৫ শতাংশ রেমিট্যান্স আসে ব্যাংক মাধ্যমে, বাকি ৩৫ শতাংশ আসে নন-ব্যাংকিং চ্যানেল, যেমন মডার্ন রেমিট্যান্স সার্ভিস এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্ম।
বছরের তুলনায় বৃদ্ধি
গত বছরের একই সময়ে প্রবাসীরা ২১২ কোটি ৯০ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন। অর্থাৎ, চলতি বছরের প্রথম ২৮ দিনে প্রায় ২১ কোটি ডলার বেশি রেমিট্যান্স এসেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রবাসীদের আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি বিনিয়োগ এবং রেমিট্যান্স আনার পদ্ধতিও উন্নত হয়েছে। অনলাইন রেমিট্যান্স সিস্টেমের ব্যবহার বাড়ায় দ্রুত এবং নিরাপদ অর্থ প্রেরণ সম্ভব হচ্ছে।
দেশের ইতিহাসে রেকর্ড
গত অর্থবছর ২০২৪-২৫ সালে দেশে প্রবাসীরা মোট ৩০.৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাঠিয়েছেন, যা দেশের ইতিহাসে কোনো নির্দিষ্ট অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেকর্ড। চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তার ভিত্তিতে ধারণা করা যায়, বছরের শেষে রেমিট্যান্সের নতুন রেকর্ড গড়া সম্ভব।
এই প্রবৃদ্ধি বিশেষ করে বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি কমাতে এবং দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞ মতামত
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, প্রবাসী আয়ের ধারাবাহিক বৃদ্ধি দেশের বিনিয়োগ ও উন্নয়ন প্রকল্পে সাহায্য করছে। বিশেষ করে ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার বাড়ায় অর্থ স্থানান্তর আরও নিরাপদ এবং দ্রুত হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা আরও বলেছেন, প্রবাসীদের জন্য নতুন নীতি এবং সুবিধা তৈরি করলে রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও বাড়ানো সম্ভব। বিশেষ করে অনলাইন রেমিট্যান্স এবং মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থার সম্প্রসারণ এই বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
অক্টোবরের ২৮ দিনে প্রবাসী আয়ের এই প্রবাহ দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। চলতি বছরের এই প্রবণতা বজায় থাকলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও শক্তিশালী হবে এবং বিনিয়োগ সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রবাসী আয়ের ধারাবাহিক বৃদ্ধি দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বছরের শেষ পর্যন্ত এই প্রবৃদ্ধি কি নতুন রেকর্ড গড়বে এবং দেশের অর্থনীতিতে কতটা দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে।
এম আর এম – ১৯৯৮,Signalbd.com



