বানিজ্য

বাজারে মুরগি ও ডিমের দাম হঠাৎ বেড়েছে

Advertisement

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন কৃষি ও কাঁচাবাজারে মুরগি এবং ডিমের দাম হঠাৎ করেই বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম প্রতি ডজনে প্রায় ১০ টাকা বেড়েছে। একই সঙ্গে ব্রয়লার এবং সোনালি মুরগির দামও গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ঢাকার মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, টাউন হল বাজার ও কারওয়ান বাজার ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে মুরগি এবং ডিমের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় দাম বেড়েছে।

ডিমের দাম বেড়েছে প্রতি ডজন ১০ টাকা

ঢাকায় গতকাল ফার্মের মুরগির বাদামি ডিমের দাম প্রতি ডজন ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহ আগেও দাম ছিল ১২০-১২৫ টাকা, যা থেকে স্পষ্ট বেড়েছে ১০ টাকা। পাড়া-মহল্লায় দাম কিছুটা বেশি, যেখানে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা পর্যন্ত ডিম বিক্রি হচ্ছে।

তেজগাঁওয়ের পাইকারি ডিম বিক্রেতা মোহাম্মদ আমানত উল্লাহ জানিয়েছেন, বৃষ্টি এবং গরমের কারণে সবজির সঙ্গে সঙ্গে মুরগি, মাছ ও মাংসের দামও বেড়েছে। এর ফলে ডিমের চাহিদাও বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজারে সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেশি হওয়ায় দাম বাড়তে বাধ্য।

মুরগির দামও বৃদ্ধি পেল

ঢাকার বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম গতকাল ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা ছিল। সোনালি মুরগি বিক্রি হয়েছে ৩১০ থেকে ৩২০ টাকায়। দুই সপ্তাহ ধরে এই দামেই বিক্রি হচ্ছে। এর আগে ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা এবং সোনালি মুরগির দাম ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা ছিল।

মুরগির দাম বৃদ্ধির সঙ্গে ক্রেতাদের ওপর চাপ পড়েছে। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষজন মুরগি ও ডিম কিনতে কষ্ট পাচ্ছেন।

সবজির দামেও ঊর্ধ্বগতি

মুরগি ও ডিমের পাশাপাশি সবজির দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। কাঁচা মরিচের দাম প্রতি কেজি এখন ২০০ টাকার ওপরে। গতকালের বিভিন্ন খুচরা বাজারে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ২২০ থেকে ২৪০ টাকায়। মাত্র মাসখানেক আগে একই মরিচের দাম ছিল ৮০ থেকে ১২০ টাকা।

করলা, কাঁকরোল, বেগুন, বরবটি ও অন্যান্য সবজির দামও প্রতি কেজিতে ৬০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে। টমেটো, পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের দামও বেড়েছে।

টমেটোর দাম বেড়ে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় পৌঁছেছে, যা আগে ছিল প্রায় ১৩০-১৪০ টাকা। পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৬৫ টাকা হয়েছে, আগের চেয়ে প্রায় ৫ টাকা বেশি। আদা ও রসুনের দাম কেজিতে প্রায় ১০ টাকা বেড়েছে।

চালের দামেও উঠতি প্রবণতা

প্রায় দেড় মাস আগে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছিল, বিশেষ করে মিনিকেট চালের দাম। বর্তমানে ডায়মন্ড, সাগর ও মঞ্জুর ব্র্যান্ডের মিনিকেট চাল প্রতি কেজি ৮০ টাকা এবং মোজাম্মেল ব্র্যান্ডের চাল ৮৫ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই দাম প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে।

ক্রেতাদের অসন্তোষ ও বাজার তদারকির প্রয়োজনীয়তা

মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা তসলিম উদ্দিন বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই বাজারে চাল, সবজি ও মুরগির দাম বেশি রয়েছে। এখন ডিমের দামও বাড়ছে। বাজারে তদারকির অভাবের কারণে দাম স্থির হচ্ছে না। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে।’

তিনি আরও জানান, সরকারের উচিত বাজারে মূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য কঠোর তদারকি করা যাতে সাধারণ মানুষ সাশ্রয়ী দামে খাদ্যপণ্য পেতে পারে।

দাম বৃদ্ধির কারণ ও পর্যালোচনা

বাংলাদেশের বাজারে ডিম ও মুরগির দাম বৃদ্ধির পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান হলো:

  • প্রাকৃতিক প্রভাব: গরম ও বর্ষার পরিবর্তন খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহে ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছে।
  • সরবরাহ ও চাহিদার ভারসাম্যহীনতা: চাহিদা বেড়েছে কিন্তু সরবরাহ যথেষ্ট না হওয়ায় দাম বেড়েছে।
  • খাদ্য উপকরণ ও ফিডের দাম বৃদ্ধিঃ মুরগির খাদ্য উপকরণ ও অন্যান্য ফিডের দাম বেড়ে যাওয়ায় পালন খরচ বৃদ্ধি পায়।
  • পরিবহন খরচ বৃদ্ধি: জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় পরিবহন ব্যয় বেড়ে যায়, যা সরাসরি পণ্যের মূল্যে প্রভাব ফেলে।
  • বাজারে spekulasi এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের কার্যক্রম: অনেক সময় মধ্যস্বত্বভোগীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বৃদ্ধি করে।

ভবিষ্যতে দাম নিয়ন্ত্রণে করণীয়

  • সরকারি হস্তক্ষেপ: বাজারে পর্যাপ্ত মুরগি ও ডিম সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকারী উদ্যোগ নিতে হবে।
  • কৃষকদের সহায়তা: ফিড ও অন্যান্য উৎপাদন খরচ কমাতে কৃষকদের সহযোগিতা করা জরুরি।
  • মূল্য নজরদারি ও বাজার তদারকি: বাজারে মূল্য নিয়ন্ত্রণে কঠোর নজরদারি করতে হবে।
  • জনসচেতনতা বৃদ্ধি: ক্রেতাদের সচেতন করে তাদের সঠিক তথ্য সরবরাহ করতে হবে।

বর্তমানে বাংলাদেশের বাজারে মুরগি, ডিম, সবজি ও চালসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম দ্রুত বাড়ছে, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় বিরূপ প্রভাব ফেলছে। দাম বৃদ্ধির কারণ ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। সরকার, বাজার কর্তৃপক্ষ ও কৃষকদের সমন্বিত প্রচেষ্টায় এই পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব।


 MAH – 12065, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button