অর্থনীতি

মসুর ডালের দাম বেড়ে কেজিতে ২০ টাকা

Advertisement

বাংলাদেশের খুচরা বাজারে মসুর ডালের দাম সাম্প্রতিক দুই মাসে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারের তথ্য অনুযায়ী, ছোট দানার মসুর ডালের দাম বর্তমানে প্রতি কেজি ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর আগে, দুই মাস আগে এই ডালের দাম ছিল ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। অর্থাৎ, মাত্র দেড় মাসের মধ্যে মসুর ডালের দাম প্রতি কেজিতে ২০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।

দামের এই বৃদ্ধির প্রভাব অন্যান্য ডালে ও পড়েছে। খুচরা বাজারে ছোলা, অ্যাংকর ডালসহ অন্যান্য ডালের দামেও সামান্য বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে।

বাজারে ডালের সরবরাহ সংকট

রাজধানীর মোহাম্মদপুর, টাউন হল বাজার, কাঁঠালবাগান ও কারওয়ান বাজারের খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে আলাপের সময় জানা যায়, সরু মসুর ডালের সরবরাহে কিছুটা ঘাটতি দেখা দিয়েছে। দেশের বাজারের বেশির ভাগ মসুর ডালই আমদানি করা হয়। ডাল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, চলতি সময়ে মসুর ডালের আমদানির পরিমাণ আগের তুলনায় কমেছে।

অন্যদিকে, সবজি, মাছ ও মাংসের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ মানুষের খাবারের চাহিদার ধরণ পরিবর্তিত হয়েছে। ডালকে সস্তা প্রোটিন হিসেবে খাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। ফলে বাজারে ডালের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দামও বাড়তে শুরু করেছে।

অন্যান্য পণ্যের বাজার পরিস্থিতি

বর্তমানে রাজধানীর খুচরা বাজারে মাংস ও মাছের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০–১৯০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩০০–৩২০ টাকায়, আর এক ডজন ডিমের দাম ১৪০ টাকা। সবজির কেজি প্রায় ৮০ টাকার আশপাশে এবং মাছের দামও আগের তুলনায় বেশ চড়া। এ কারণে সীমিত ও নিম্ন আয়ের মানুষরা ডালের প্রতি আরও নির্ভরশীল হয়ে উঠেছেন।

বাজার পরিদর্শনের চিত্র

গত সোমবার প্রতিবেদক রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, টাউন হল বাজার, কাঁঠালবাগান বাজার এবং কারওয়ান বাজারে ঘুরে দেখেন। সেখানে দেখা যায়, সরু মসুর ডালের দাম দেড় মাস আগের তুলনায় প্রতি কেজিতে ২০ টাকা বেশি। অন্য ডালের দামের পরিবর্তন সামান্য হলেও, খুচরা পর্যায়ে কিছুটা বৃদ্ধির ছোঁয়া রয়েছে।

মোটা দানার মসুর ডালের দাম বর্তমানে অপরিবর্তিত। প্রতিকেজি মোটা মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১০০–১০৫ টাকায়। ছোলা এবং অ্যাংকর ডালের দাম সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন প্রতি কেজি ছোলা ১১০ টাকা, ছোলার ডাল ১২০–১২৫ টাকা এবং অ্যাংকর ডাল ৭০–৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কারওয়ান বাজারের পাইকারি দোকান “একতা জেনারেল স্টোর” এর বিক্রেতা মো. জুয়েল বলেন, “পাইকারিতে শুধু মসুর ডালের দাম বেড়েছে। অন্যান্য ডালের দাম সামান্য ওঠানামা করেছে, তবে বর্তমানে তা আগের মতোই রয়েছে।”

মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের একজন মুদিদোকান মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “পাইকারিতে ছোলা ও অ্যাংকর ডালের দাম বাড়েনি। কিন্তু মসুর ডালের দাম বাড়ায় আমরা খুচরা পর্যায়ে কিছুটা দাম বাড়িয়েছি।”

মুগ ডালের দাম কমেছে

বাজারে মুগ ডালের দাম সামান্য কমেছে। দুই মাস আগে ভালো মানের মুগ ডালের দাম ছিল ১৭০–১৭৫ টাকা, বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ১৬০–১৬৫ টাকায়। আমদানি করা সাধারণ মানের মুগ ডালের দাম কেজি ১২০ টাকা।

সরকারী ও টিসিবি তথ্য

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) জানিয়েছে, গত এক মাসে সরু মসুর ডাল ও ছোলার দাম প্রতি কেজিতে ৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যান্য ডালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় সরু মসুর ডালের দাম বর্তমানে ১৭ শতাংশ বেশি। এক বছর আগে সরু মসুর ডালের দাম ছিল ১৩০–১৩৫ টাকা প্রতি কেজি।

ডাল আমদানিকারক এবং ব্যবসায়ীদের মন্তব্য

বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও ডাল আমদানিকারক নেসার উদ্দিন খান বলেন, “গত দুই মাসে ডাল আমদানির পরিমাণ কিছুটা কমেছে। সবজির দাম বেশি থাকার কারণে মসুর ডালের চাহিদা বেড়েছে। সরবরাহের ঘাটতির কারণে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সরবরাহ বৃদ্ধি পেলে দাম আবারও কমতে পারে।”

তিনি আরও জানান, ডালের বাজারে ঋতুভিত্তিক ওঠানামা স্বাভাবিক। তবে এই মুহূর্তে সরু মসুর ডালের সরবরাহ সীমিত হওয়ায় দাম কিছুটা অস্থির।

মসুর ডালের চাহিদা বৃদ্ধির কারণ

বাজার বিশ্লেষণ অনুযায়ী, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের পরিবারগুলো প্রোটিনের প্রধান উৎস হিসেবে ডালের উপর নির্ভরশীল। সবজির দাম বৃদ্ধি এবং মাছ-মাংসের দাম বৃদ্ধি ডালের চাহিদা আরও বাড়িয়েছে। বিশেষ করে, ছোট দানার মসুর ডাল সস্তা হওয়ায় এটি বাজারে জনপ্রিয়।

বাণিজ্যিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ডালের বাজারের স্থিতিশীলতা মূলত আমদানির ওপর নির্ভর করে। সরু মসুর ডাল প্রধানত বিদেশ থেকে আসে, আর আমদানিতে যদি দেরি বা কমানো হয়, তা সরাসরি খুচরা বাজারে প্রভাব ফেলে।

বাজার পর্যবেক্ষণ ও ভবিষ্যত প্রভাব

বর্তমান পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, ডালের দাম সামান্য উচ্চ থাকবে। তবে, যদি সরকারী নীতি অনুযায়ী আমদানি বাড়ানো হয় এবং পাইকারি বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক হয়, দাম আবার স্থিতিশীল হতে পারে।

বাজার বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য ডালের দাম বৃদ্ধি কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। তাই সরকারি তত্ত্বাবধানে ডাল সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরি।

সংক্ষেপে, দুই মাসের মধ্যে সরু মসুর ডালের দাম প্রতি কেজিতে ২০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। মূল কারণ সরবরাহের ঘাটতি, আমদানি কমে যাওয়া এবং অন্যান্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি। খুচরা বাজারে অন্যান্য ডালের দাম সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে মোটা মসুর ডাল এবং মুগ ডালের দাম কিছুটা কমেছে।

সরকারি সংস্থা ও ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুযায়ী, সরবরাহ পুনরায় স্বাভাবিক হলে দাম কমে আসবে। তবে, বর্তমানে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষদের জন্য ডালের দাম বৃদ্ধি চিন্তার বিষয়।

MAH – 13206 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button