বাংলাদেশ

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী

Advertisement

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী মঙ্গলবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত জাতীয় যুবশক্তির আয়োজিত ‘জাতীয় যুব সম্মেলন ২০২৫’-এ ঘোষণা করেন, ফেব্রুয়ারিতে কোনো জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে না। তিনি বলেন, পূর্বের সংকট ও শহিদদের আত্মত্যাগের পরিপ্রেক্ষিতে সংস্কার ও নতুন সংবিধান ছাড়াই নির্বাচন করলে তা হবে অগ্রহণযোগ্য এবং তা দেশের জন্য ধ্বংসাত্মক প্রভাব বিস্তার করবে।

নির্বাচনের তারিখ নিয়ে বিতর্ক ও পাটওয়ারীর অবস্থান

জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা তুঙ্গে ওঠা এই মুহূর্তে সরকারি মহল ফেব্রুয়ারির দিকে ভোটের প্রস্তুতি নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তবে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেছেন, “ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না।” তার মতে, পূর্বে যারা দেশের জন্য প্রাণ উৎসর্গ করেছে, তাদের আত্মত্যাগের মর্যাদা রাখতে না পারলে নির্বাচন আয়োজনের কোনো মূল্য নেই।

তিনি আরও বলেন, “যদি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হয়, তাহলে আমার শহিদ ভাইদের রক্তের মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে হবে। নতুন সংবিধান ও সংস্কার ছাড়া একই ফ্যাসিবাদী সিস্টেমে ভোটের আয়োজন হলে এত শহিদ হওয়ার কোনো প্রয়োজনই ছিল না।”

শহিদদের ত্যাগ ও সংবিধান সংস্কারের দাবি

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ইতিহাসে সংবিধান সংস্কার ও নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। ২০১৮ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত একাধিক বিক্ষোভ ও আন্দোলনে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। তাদের অধিকাংশই নতুন সংবিধান, নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক সংস্কারের দাবি জানিয়ে রাস্তায় নামেন।

এনসিপি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে, পুরনো ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থা ও দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক কাঠামো থেকে বেরিয়ে আসা ছাড়া দেশের প্রকৃত উন্নয়ন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। পাটওয়ারীর বক্তব্যেও এই অভিমত প্রতিফলিত হয়েছে যে, পুরনো রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ভোট করানো হলে তা শুধুমাত্র মঞ্চের সাজসজ্জা হবে, আর প্রকৃত পরিবর্তন আসবে না।

প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া: রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে নানা প্রতিক্রিয়া

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর এই মন্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে সরগরম সৃষ্টি করেছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো তার বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে বলছে, এটি সরকারের দুর্বলতারই প্রমাণ যে তারা বাস্তবতার স্বীকারোক্তি করতে বাধ্য হচ্ছে। একই সঙ্গে তারা দাবি করেছে, দেশে প্রজ্ঞাপনকৃত সময়ের আগে নির্বাচন করা হলে তা হবে সম্পূর্ণ অবৈধ ও জনগণের স্বার্থ বিরোধী।

অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলের কিছু শিবির এই বক্তব্যকে ‘রাজনৈতিক নাটক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে এবং বলেছে, সরকার সময়মত নির্বাচন করানোর জন্য সব প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা জনগণকে বিশ্বাস দিতে চায় যে, দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।

তরুণ প্রজন্ম ও দেশের ভবিষ্যত

পাটওয়ারী তাঁর ভাষণে তরুণদের প্রতি বিশেষ আহ্বান জানিয়েছেন, যারা দেশের ভবিষ্যত গড়ে তুলবে তাদের হাতে দেশের পরিবর্তনের দায় বর্তায়। তিনি উল্লেখ করেন, “বঙ্গভবনের মতো গণভবনের পতনও তরুণ প্রজন্মের হাত ধরেই সম্ভব হবে।” তরুণদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ও পরিবর্তনের আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়া জরুরি বলে তার মত।

এনসিপির যুবশক্তি এই মঞ্চে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তারা নতুন প্রজন্মকে সক্রিয় করে দেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাবে এবং অবৈধ, অসংবিধানিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে।

ভবিষ্যতের দৃষ্টিভঙ্গি: ভোট ও গণতন্ত্রের সংকট

দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার শৃঙ্খলা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচনের ওপর সন্দেহ ও অবিশ্বাস বেড়েই চলেছে। নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর বক্তব্যই তুলে ধরেছে, দেশের সংবিধান ও রাজনৈতিক সংস্কারের দাবি কতটা তীব্র।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, সরকারের ওপর চাপ বৃদ্ধির জন্য এবং নতুন সংবিধান নিয়ে আলোচনার জন্য এই ধরনের বক্তব্য জাতীয় রাজনীতিকে নতুন করে উত্তেজিত করেছে। তবে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করছেন, আগামী কয়েক মাসে যদি রাজনৈতিক দলগুলো মিলে সঠিক দিকনির্দেশনা দেয়, তাহলে ভোট প্রক্রিয়া সুস্থ ও স্বচ্ছ হবে।

সংক্ষেপে

জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর এই কঠোর মন্তব্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তার বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, সংস্কার ও নতুন সংবিধান ছাড়া আগামি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য। রাজনৈতিক পুনর্গঠন না হলে দেশের গণতন্ত্রে সঠিক উন্নয়ন অসম্ভব বলে তিনি মনে করেন।

আগামী দিনে এই রাজনৈতিক সংকট ও নির্বাচনের তারিখ ঘিরে যে উত্তেজনা থাকবে, তা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও দেশের যুবক সমাজের শক্তি ও সচেতনতার ওপর অনেকটাই নির্ভর করবে দেশ কী পথে এগোবে।

এম আর এম – ০৮২৭, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button