অর্থনীতিবানিজ্য

বাড়তি ভ্যাটের কারণে দাম বাড়ছে বিভিন্ন পণ্যের


সম্প্রতি সরকারের বাড়তি ভ্যাটের কারণে দাম বাড়ছে বিভিন্ন পণ্যের পণ্যের মূল্য উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, যা সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলছে।

পোশাক খাতে ভ্যাট বৃদ্ধি ও এর প্রভাব

গত ৯ জানুয়ারি সরকার ব্র্যান্ডেড পোশাকের ওপর ভ্যাট হার সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করে। তবে ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে পরে তা কমিয়ে ব্র্যান্ডেড পোশাকে ১০ শতাংশ এবং নন-ব্র্যান্ডেড পোশাকে আগের মতো সাড়ে ৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। ফলে ব্র্যান্ডেড পোশাকে আড়াই শতাংশ ভ্যাট বৃদ্ধি পায়। এর ফলে পোশাকের দাম বেড়ে ক্রেতাদের অতিরিক্ত ব্যয় করতে হচ্ছে।

আমদানি করা ফলের মূল্যবৃদ্ধি

আমদানি করা আপেল, নাশপাতি, মাল্টা, আঙুরসহ বিভিন্ন ফলের ওপর সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে এসব ফলের আমদানি খরচ বেড়েছে, যা খুচরা বাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারণ হয়েছে। উত্তরার ফল বিক্রেতা মকবুল হোসেন জানান, পাইকারি পর্যায়ে ১৪ কেজি ওজনের মাল্টার কার্টনের দাম ২০০ টাকা বেড়েছে, ফলে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি মাল্টার দাম ২০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।

রঙের বাজারে মূল্যবৃদ্ধি

সরবরাহ পর্যায়ে রঙের ওপর সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে রঙের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে, যা খুচরা বাজারে ৪-৫ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির কারণ হয়েছে। কারওয়ান বাজারের রঙের দোকানগুলোতে একটি সুপরিচিত ব্র্যান্ডের ৩.৬ লিটারের এক কৌটা রঙের দাম ১০০ টাকা বেড়ে ১,৯০০ টাকায়৭৯৮/৭৮/৭৪বিক্রি হচ্ছে।

এলপিজি গ্যাসের ভ্যাট ও মূল্য পরিস্থিতি

এলপিজি গ্যাসের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে। এনবিআর-এর বিশেষ আদেশে এই ভ্যাট বৃদ্ধির বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে। ফলে এলপিজি গ্যাসের দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা বাসাবাড়ি ও শিল্প কারখানার ব্যবহারকারীদের ওপর প্রভাব ফেলবে।

অন্যান্য পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি

ফেসিয়াল টিস্যু, পকেট টিস্যু, ন্যাপকিন টিস্যু, টয়লেট টিস্যু, কিচেন টিস্যুসহ বিভিন্ন ধরনের টিস্যুর ওপর ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে এসব পণ্যের দাম দ্বিগুণ হতে পারে। এছাড়া বিস্কুট, জুস, ড্রিংক, ফলের রস, ইলেকট্রোলাইট ড্রিংক, কেক (৩০০ টাকার বেশি দামের), আচার, টমেটো সস ও কেচাপ ইত্যাদি পণ্যের ওপর ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে, যা শিশুদের প্রিয় এসব পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণ হবে।

ব্যবসায়ীদের প্রতিক্রিয়া ও করণীয়

বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা আশা করছেন, বাড়তি ভ্যাট প্রত্যাহার করা হবে। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী জানান, ভ্যাট বাড়ানো হলেও তাঁরা এখনো দাম বাড়াননি এবং বাড়তি ভ্যাটের টাকা কোম্পানি থেকে ভর্তুকি হিসেবে দিচ্ছেন। তাঁরা আশা করছেন, সরকার মানুষের ওপর খরচের এই বাড়তি চাপ তুলে দেওয়া থেকে বিরত থাকবে।

সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া

মূল্যবৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষ তাদের খরচ কমাতে বাধ্য হচ্ছেন। মিরপুরের বাসিন্দা ইলিয়াস হোসেন জানান, তিনি এখন শুধু বাচ্চাদের জন্য ফল কিনছেন, নিজে খেতে পারছেন না। কেনা আরও কমিয়ে দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই বলে তিনি আক্ষেপ করেন।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চড়া মূল্যস্ফীতির পরিস্থিতির মধ্যে শুল্ক-কর বাড়ানো ঠিক হয়নি। আগামী বাজেট পর্যন্ত অপেক্ষা করা যেত। ধনীদের ওপর কর বাড়িয়ে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর ওপরও জোর দেওয়া দরকার ছিল। সিপিডির গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, শুল্ক-কর বাড়ানোর ফলে শহরের নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের জীবনে বেশি প্রভাব পড়ছে। খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে। সরকার রাজস্ব আদায় বাড়ানোর জন্য সহজ পথে গেছে। কিন্তু যাঁরা কর ফাঁকি দিচ্ছেন, তাঁদের প্রকারান্তরে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘রাজস্ব বাড়াতে প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর জোর দেওয়া উচিত। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে সেই উদ্যোগ দেখছি না। অথচ রাজনৈতিক সরকারের চেয়ে এ ধরনের সরকারের কাছে এমন কঠোর নীতির প্রত্যাশা বেশি।’

বর্ধিত ভ্যাটের কারণে বিভিন্ন পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলছে। সরকারের উচিত এই বিষয়ে পুনর্বিব।অর্থনীতি

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button