নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা, ২৮ জানুয়ারি ২০২৫
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর আশ্বস্ত করেছেন যে, দুর্বল ব্যাংকের গ্রাহকেরা ধাপে ধাপে তাদের জমা টাকা ফেরত পাবেন। তবে তিনি গ্রাহকদের এই প্রক্রিয়ায় ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়েছেন। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আজ মঙ্গলবার মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন। দুর্বল ব্যাংকের গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস
ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ ও অর্থনীতির বর্তমান চিত্র
অনুষ্ঠানে এমআরএর এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারক। আলোচক ছিলেন পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল কাদের।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো তিন লাখ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ২৬ শতাংশ বেশি। এমআরএ সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো একাই দুই লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে এবং ৯৭ হাজার কোটি টাকার আমানত সংগ্রহ করেছে।
গ্রাহকদের প্রশ্ন ও গভর্নরের জবাব
অনুষ্ঠানের শেষ দিকে একজন উপস্থিতি জানতে চান, দুর্বল ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকের টাকার কী হবে। এ প্রসঙ্গে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, “আমি গত ১০ বছর ধরে বলে আসছি, এস আলম গ্রুপের ব্যাংকে টাকা রাখবেন না। কিন্তু আপনারা বেশি সুদের প্রলোভনে সেখানে টাকা রেখেছেন। এখন আমরা আপনাদের সাহায্য করব। তবে ধাপে ধাপে এটি করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা ব্যাংক রেজল্যুশন অ্যাক্টের দিকে যাচ্ছি। কিছু ব্যাংক একীভূত করতে হবে। এই বছরই হয়তো অনেক কিছু করা হবে। তবে নিশ্চয়তা দিচ্ছি, গ্রাহকেরা হয় টাকা ফেরত পাবেন বা বন্ড পাবেন।”
খেলাপি ঋণ নিয়ে সচিবের বক্তব্য
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারক বলেন, “বড় বিনিয়োগকারীরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে এবং তাদের মধ্যে বড় অংশ খেলাপি হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে আমরা হয়রান হচ্ছি। তবে ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতারা তুলনামূলক ভালো অবস্থানে আছেন।”
ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পর্যালোচনার প্রয়োজন
পিকেএসএফের এমডি মো. ফজলুল কাদের বলেন, বর্তমানে দাবি করা হচ্ছে প্রায় ছয় কোটি ৪০ লাখ ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতা আছেন। তবে একাধিক হিসাব সমন্বয় করলে এই সংখ্যা তিন কোটি ছাড়াবে না। তিনি বলেন, “সরকারের ২২টি মন্ত্রণালয় ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত।”
ভবিষ্যতে ব্যাংক খাতের সংস্কার
গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানান, ব্যাংক খাতে বড় ধরনের সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। কিছু ব্যাংক একীভূত করার পাশাপাশি ধাপে ধাপে গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।
ব্যাংক খাতের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সরকারের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগে গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষা এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সময়োপযোগী এবং কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমেই এই খাতের সংকট সমাধান সম্ভব।