অর্থনীতি

১০ দিনে রেমিট্যান্স প্রবাহে ১৯.৩ শতাংশ বৃদ্ধি

চলতি সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম ১০ দিনে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স প্রবাহে ১৯.৩ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এই সময়ে দেশে এসেছে ১,১৩২ মিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৮৩ মিলিয়ন ডলার বেশি।

প্রবাসীরা চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের ১০ তারিখ পর্যন্ত মোট ৬,০৩২ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। গত অর্থবছরের একই সময়ে এটি ছিল ৫,৮৭ মিলিয়ন ডলার। রেমিট্যান্সের এই প্রবৃদ্ধি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার অবস্থাকে শক্তিশালী করছে এবং অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

রেমিট্যান্স প্রবাহের বৃদ্ধি এবং কারণ

বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রবাসীদের রেমিট্যান্স বৃদ্ধি সরকারের নীতি ও সুবিধার সঙ্গে সম্পর্কিত। প্রবাসীদের জন্য সহজীকৃত রেমিট্যান্স প্রক্রিয়া, কম খরচে অর্থ পাঠানোর সুযোগ এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ডিজিটাল সেবা বৃদ্ধির কারণে দেশে প্রবাসী আয় বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, “প্রবাসী আয় বৃদ্ধি দেশের বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণে সহায়ক। এটি সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের জন্য সাশ্রয়ী পরিবেশ তৈরি করছে।”

অর্থনীতিতে প্রভাব

রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সংরক্ষণ, ব্যাংকিং খাত এবং জিডিপির ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে এই প্রবাহ নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ:

  • বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বৃদ্ধি: রেমিট্যান্স ব্যাংকিং খাতের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ বাড়ায়।
  • ভোক্তা ব্যয় ও ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি: প্রবাসী পরিবারগুলোর হাতে আরও টাকা থাকায় ভোক্তা ব্যয় বাড়ে।
  • বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে সহায়তা: বিদেশ থেকে আসা অর্থ বিভিন্ন ব্যবসা ও বিনিয়োগে ব্যবহার হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে দেশের অর্থনীতি আরও স্থিতিশীল হবে।

প্রবাসীদের অবদান

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশে কর্মরত প্রবাসীরা মাসিক আয়ের একটি অংশ দেশে পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন।

বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, চলতি বছরের প্রথম ১০ দিনে রেমিট্যান্স প্রবাহে ১৯.৩ শতাংশ বৃদ্ধি প্রমাণ করে প্রবাসীদের অবদান ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। এটি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার অভাব কমাতে এবং অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

পূর্ববর্তী প্রবণতা

গত অর্থবছরের ২০২৪-২৫ সালে প্রবাসী আয় ছিল ৩০.৩৩ বিলিয়ন ডলার, যা তার পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় ২৬.৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। এই ধারাবাহিক বৃদ্ধির ফলে দেশে রেমিট্যান্সের গুরুত্ব আরও বেড়েছে।

সেপ্টেম্বরের প্রথম ৯ দিনে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১০১ কোটি ৮০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১২,৪২০ কোটি টাকা। এটি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি।

ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা

বিশ্লেষকরা মনে করেন, প্রবাসী আয়ের প্রবাহ অব্যাহত থাকলে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব দীর্ঘমেয়াদে থাকবে। সরকারের সহজীকৃত নীতি এবং ডিজিটাল রেমিট্যান্স সুবিধার কারণে প্রবাসীরা আরও বেশি পরিমাণে টাকা পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন।

দেশের অর্থনীতি বিশেষ করে বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণ, জিডিপি বৃদ্ধি এবং ভোক্তা ব্যয়ের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদে সুবিধা পাবে।

শেষ কথা 

চলতি মাসের প্রথম ১০ দিনে রেমিট্যান্স প্রবাহে ১৯.৩ শতাংশ বৃদ্ধি দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। প্রবাসী আয় বৃদ্ধি বৈদেশিক মুদ্রার সংরক্ষণ, ভোক্তা ব্যয় ও বিনিয়োগে সহায়ক।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, প্রবাসী আয় বৃদ্ধি বজায় রাখতে সরকারের প্রণোদনা, সহজীকৃত রেমিট্যান্স সুবিধা এবং ব্যাংকিং খাতের ডিজিটাল সেবাকে আরও উন্নত করা জরুরি।

এছাড়া দেশের জনগণ ও ব্যবসায়ীরা প্রবাসী আয়ের মাধ্যমে তৈরি হওয়া অর্থনৈতিক সুবিধা কাজে লাগিয়ে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে সহায়তা করতে পারবেন।

এম আর এম – ১৩০২,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button