দাম বাড়ল স্মারক স্বর্ণ ও রৌপ্যমুদ্রার

বাংলাদেশ ব্যাংক স্মারক স্বর্ণ ও রৌপ্যমুদ্রার নতুন দাম ঘোষণা করেছে। আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বাজারে স্বর্ণের মূল্যবৃদ্ধির কারণে স্বর্ণমুদ্রার দাম এক লাফে বেড়েছে ২০ হাজার টাকা এবং রৌপ্যমুদ্রার দাম বেড়েছে ১ হাজার ৫০০ টাকা। আজ থেকে নতুন দাম কার্যকর হচ্ছে।
ঘটনার বিস্তারিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব কারেন্সি ম্যানেজমেন্ট বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্মারক স্বর্ণ ও রৌপ্যমুদ্রার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতিটি স্বর্ণমুদ্রার দাম ২০ হাজার টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে রৌপ্যমুদ্রার দামও বেড়েছে দেড় হাজার টাকা। ফলে এখন থেকে প্রতিটি রৌপ্যমুদ্রা বিক্রি হবে ৮ হাজার ৫০০ টাকায়, যা এতদিন বিক্রি হতো ৭ হাজার টাকায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম ক্রমাগত বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় স্মারক স্বর্ণ ও রৌপ্যমুদ্রার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সাধারণত বিশেষ অনুষ্ঠান বা ঐতিহাসিক ঘটনা স্মরণে সীমিত সংখ্যক স্মারক মুদ্রা বাজারে ছাড়ে। এগুলো সংগ্রাহক ও বিনিয়োগকারীদের কাছে বিশেষ জনপ্রিয়।
গত কয়েক বছরে স্বর্ণের দাম বিশ্ববাজারে ওঠানামার মধ্যেই ছিল। বিশেষ করে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, মুদ্রাস্ফীতি এবং ভূরাজনৈতিক সংকটের কারণে স্বর্ণের চাহিদা বেড়েছে। এর প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে।
এর আগে ২০২২ এবং ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক কয়েক দফায় স্মারক স্বর্ণমুদ্রার দাম সমন্বয় করেছিল। তবে এবার একসাথে ২০ হাজার টাকা বৃদ্ধি নজরকাড়া পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
নতুন দাম কার্যকর হওয়ার ফলে স্মারক মুদ্রা ক্রেতা ও সংগ্রাহকদের ওপর তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়বে। অনেকেই মনে করছেন, দাম বাড়লেও এগুলোর চাহিদা কমবে না। কারণ স্মারক মুদ্রা শুধু অলংকার হিসেবে নয়, দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ হিসেবেও ধরা হয়।
রাজধানীর মতিঝিলের এক মুদ্রা সংগ্রাহক বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের স্মারক মুদ্রা সব সময়ই মূল্যবান। দাম কিছুটা বাড়লেও এগুলো সংগ্রহের আগ্রহ কমবে না, বরং ভবিষ্যতে এর মূল্য আরও বাড়তে পারে।”
তবে সাধারণ গ্রাহকদের মধ্যে ভিন্ন প্রতিক্রিয়াও দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ মনে করছেন, উচ্চমূল্যের কারণে এ ধরনের মুদ্রা এখন কেবল সচ্ছল শ্রেণির নাগালের মধ্যেই সীমিত থাকবে।
পরিসংখ্যান ও তুলনা
বর্তমানে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম রেকর্ড উচ্চতায় অবস্থান করছে। ২২ ক্যারেট স্বর্ণের প্রতি ভরি বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৯৪৭ টাকায়। ২১ ক্যারেট স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৭৭ হাজার ৫০৩ টাকা এবং ১৮ ক্যারেট স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ৫২ হাজার ১৪৫ টাকায়।
তুলনামূলকভাবে, বাংলাদেশ ব্যাংকের স্মারক স্বর্ণমুদ্রার দাম বাজারমূল্যের চেয়ে কিছুটা বেশি হলেও এগুলোর মূল্য প্রতীকী ও সংগ্রাহকদের কাছে আলাদা গুরুত্ব বহন করে।
অন্যদিকে রৌপ্যের বাজারদরও বৃদ্ধি পেয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে রৌপ্যের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়েই দেশে স্মারক রৌপ্যমুদ্রার দাম সমন্বয় করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞ মতামত
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এই মূল্যবৃদ্ধি কেবল বাজার পরিস্থিতির প্রতিফলন নয়, বরং বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন একটি দিকও নির্দেশ করছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. হুমায়ুন কবির বলেন, “স্বর্ণ সবসময়ই নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের স্মারক স্বর্ণমুদ্রার দাম বাড়ানো বাজারের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ পদক্ষেপ। দীর্ঘমেয়াদে এগুলোর চাহিদা আরও বাড়বে।”
তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, স্বর্ণ ও রৌপ্যের দাম বাড়তে থাকলে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। ফলে বিনিয়োগ বৈষম্য বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
পরিশেষে
স্মারক স্বর্ণ ও রৌপ্যমুদ্রার নতুন দাম ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করেছে। দাম বাড়লেও সংগ্রাহক ও বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—স্বর্ণ ও রৌপ্যের ক্রমবর্ধমান দাম ভবিষ্যতে সাধারণ মানুষের নাগালে থাকবে নাকি তা শুধু ধনী শ্রেণির বিনিয়োগ সামগ্রীতেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে?
এম আর এম – ১২৯০,Signalbd.com