বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ৩০.৩১ বিলিয়ন ডলার

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক হিসাব অনুযায়ী দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বর্তমানে ৩০.৩১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এ ক্ষেত্রে গত মাসের তুলনায় কিছুটা হ্রাস দেখা গেছে। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক অঙ্গনে এই পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
রিজার্ভ হ্রাসের কারণ
বাংলাদেশ ব্যাংক এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) জুলাই-আগস্ট মাসে ১৫০ কোটি ডলার দায় পরিশোধ করেছে। এই লেনদেনের ফলে দেশের গ্রস রিজার্ভে সামান্য হ্রাস হয়েছে। আকু হলো একটি আন্তঃদেশীয় লেনদেন নিস্পত্তি ব্যবস্থা, যা বাংলাদেশের সঙ্গে ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল ও পাকিস্তানের মধ্যে আন্তর্জাতিক অর্থ লেনদেন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ব্যবহৃত হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আকুর দায় পরিশোধের আগে রিজার্ভ ৩১.৪২ বিলিয়ন ডলারের বেশি ছিল। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিপিএম৬ হিসাব অনুযায়ী রিজার্ভ বর্তমানে ২৫.৪০ বিলিয়ন ডলারে রয়েছে।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ইতিহাস
বাংলাদেশের রিজার্ভ ইতিমধ্যে গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য ওঠানামা দেখেছে। ২০২১ সালের আগস্টে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে। এরপর ধাপে ধাপে হ্রাস পেয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে এটি ২০.৪৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।
সাম্প্রতিক সময়ে প্রবাসী আয় ও রপ্তানি প্রবৃদ্ধি রিজার্ভ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। গত অর্থবছরে প্রবাসী আয় প্রায় ২৭ শতাংশ বৃদ্ধি পায় এবং চলতি অর্থবছরেও প্রায় ১৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে, যা রিজার্ভে অবদান রেখেছে।
প্রভাব ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ
রিজার্ভ কমার প্রভাব সরাসরি দেশের মুদ্রানীতি, আমদানি খরচ এবং বৈদেশিক বিনিয়োগে পড়তে পারে। বিশেষ করে অতি প্রয়োজনীয় আমদানি, যেমন জ্বালানি ও কাঁচামাল খাতে প্রভাব ফেলতে পারে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার পর্যাপ্ত রিজার্ভ থাকা বিদেশি ঋণ, বিনিয়োগ এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক লেনদেনে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বৈদেশিক রিজার্ভ হ্রাস একটি স্বাভাবিক আর্থিক চক্র, তবে এটি দীর্ঘমেয়াদে হঠাৎ পতন ঘটলে দেশের মুদ্রা ও বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।
সরকারের পদক্ষেপ
বাংলাদেশ সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এর মধ্যে রয়েছে:
- প্রবাসী আয় বৃদ্ধির উদ্যোগ,
- রপ্তানি খাত সম্প্রসারণ,
- বিদেশি ঋণ ও লেনদেনের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা,
- আমদানি ব্যালান্সিং এবং অপ্রয়োজনীয় খরচ নিয়ন্ত্রণ।
এই পদক্ষেপের মাধ্যমে সরকারের লক্ষ্য হলো দেশের বৈদেশিক মুদ্রার পর্যাপ্ত রিজার্ভ ধরে রাখা এবং অর্থনীতির স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট
আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের মান, তেলের মূল্য এবং বিশ্ব অর্থনীতির ওঠানামা বাংলাদেশের রিজার্ভে সরাসরি প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে পেট্রোলিয়াম ও খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে আমদানি ব্যয় বেড়ে যায় এবং রিজার্ভ কমে।
বৈদেশিক বিনিয়োগ ও আন্তর্জাতিক ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে রিজার্ভ যথেষ্ট না থাকলে দেশের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতায় প্রভাব পড়তে পারে।
বিশেষজ্ঞ মতামত
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, রিজার্ভের সামান্য হ্রাস উদ্বেগের বিষয় নয়। তবে, দেশের বৈদেশিক লেনদেন ও বাজার স্থিতিশীল রাখতে ব্যাংক ও সরকারের সমন্বিত পদক্ষেপ জরুরি। তারা বলেন, “প্রবাসী আয় ও রপ্তানিতে ধারাবাহিক বৃদ্ধি রিজার্ভ বৃদ্ধিতে মূল চালিকা শক্তি।”
বিশ্লেষকরা আরও বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থিরতা ও জ্বালানি মূল্যের ওঠানামা রিজার্ভে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই সরকারের জন্য এটি একটি চলমান চ্যালেঞ্জ।
পরিশেষে
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বর্তমানে ৩০.৩১ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। আকুর দায় পরিশোধ ও বৈদেশিক লেনদেনের কারণে সামান্য হ্রাস হয়েছে। সরকার ও ব্যাংক এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, যথাযথ নীতি গ্রহণ ও প্রবাসী আয় বৃদ্ধি রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করবে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারের ওঠানামা ও বৈদেশিক চাহিদা বিবেচনায় ভবিষ্যতেও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
এম আর এম – ১২৩৪,Signalbd.com