অর্থনীতি

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও বেড়েছে

Advertisement

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩০.৮৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর বিপিএম-৬ পদ্ধতি অনুযায়ী, দেশের নিট রিজার্ভ বর্তমানে ২৫.৮৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার

রিজার্ভ বৃদ্ধির বিস্তারিত

বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে রপ্তানি আয়, প্রবাসী আয়, এবং বৈদেশিক ঋণ ব্যবস্থাপনার কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি হয়েছে। ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, “আমাদের নীতি অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও আমদানির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা হচ্ছে।”

নিট রিজার্ভ গণনা করা হয়, যেখানে মোট রিজার্ভ থেকে স্বল্পমেয়াদি দায় বাদ দেওয়া হয়। এর ফলে প্রকৃত অর্থনৈতিক সক্ষমতা এবং মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা বোঝা যায়।

গত কয়েক মাসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ধীরগতির বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত রিজার্ভে প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বৃদ্ধির খবর এসেছে। এর পেছনে প্রবাসী আয়ের বৃদ্ধি, রপ্তানি খাতের সম্প্রসারণ এবং সরকারি ঋণ ব্যবস্থাপনা মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের বৃদ্ধি দেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। রিজার্ভের এই উচ্চতা বিপুল আমদানি ও বিনিয়োগ সহজলভ্য করার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধির প্রভাব অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হচ্ছে।

  1. মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ: মুদ্রার প্রাপ্যতা বৃদ্ধি পেলে আমদানি খাত সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয় এবং তাতে বাজারে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল থাকে।
  2. আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের আস্থা: রিজার্ভের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা দেশের অর্থনীতিতে বিনিয়োগ করতে উৎসাহী হন।
  3. মুদ্রা বাজারে স্থিতিশীলতা: বৈদেশিক মুদ্রার সুষ্ঠু জোগান ডলারের দামের ওঠানামা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

অর্থনীতিবিদ ড. রাফিকুল ইসলাম বলেন, “নিট রিজার্ভ বৃদ্ধি দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতার প্রতিফলন। এটি ব্যবসায়িক ও আমদানি খাতের জন্য ইতিবাচক সংকেত।”

তুলনামূলক পরিসংখ্যান

২০১৯ সালের তুলনায় বর্তমান বৈদেশিক রিজার্ভ প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার বেশি। ২০১৯ সালে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মোট রিজার্ভ ছিল প্রায় ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বর্তমানে ৩০.৮৭ বিলিয়নে উন্নীত হয়েছে।
এটি দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে আত্মনির্ভরতার চিহ্ন হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।

বিশ্লেষণ

রিজার্ভ বৃদ্ধির পেছনে সরকারের অর্থনৈতিক নীতি, রপ্তানি বৃদ্ধির দিকনির্দেশনা, এবং প্রবাসী আয়কে মূল প্রভাবশালী কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা দেশের বিনিয়োগ পরিবেশকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলবে।

ড. মোহাম্মদ জাহিদুল হক বলেন, “রিজার্ভ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশে বিনিয়োগ ও আমদানি কার্যক্রম সহজ হবে। তবে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে অবশ্যই রপ্তানি খাতের সম্প্রসারণ ও মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।”

সংক্ষিপ্তসার

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের বৃদ্ধি দেশের অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য ইতিবাচক সংবাদ। নিট রিজার্ভ বৃদ্ধির ফলে দেশের বাজারে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বিনিয়োগের আস্থা বৃদ্ধি, এবং আমদানির স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হচ্ছে।
তবে বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলছেন, বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে সরকারি নীতি এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এম আর এম – ১০২০, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button