চীন ভারতে বিরল খনিজ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নিল

ভারত ও চীনের মধ্যে সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরু হলো। চীন সম্প্রতি ভারতে বিরল খনিজ, সার ও টানেল-বোরিং মেশিন রপ্তানির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। এই পদক্ষেপটি দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্কের উন্নতির ইঙ্গিত বহন করে।
চীনের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকে এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন। তিনি জানান, চীন ভারতের তিনটি প্রধান উদ্বেগ—সারের সরবরাহ, বিরল চৌম্বক খনিজ এবং টানেল-বোরিং মেশিনের সরবরাহ—সমাধানে পদক্ষেপ নিচ্ছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ইতোমধ্যে এসব পণ্যের রপ্তানি শুরু হয়েছে।
বিরল খনিজের গুরুত্ব ও প্রভাব
বিরল খনিজ বা রেয়ার আর্থ এলিমেন্টস (REEs) আধুনিক প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা শিল্পের জন্য অপরিহার্য। মোবাইল ফোন, কম্পিউটার চিপ, বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি, উইন্ড টারবাইন, স্যাটেলাইট এমনকি ক্ষেপণাস্ত্র ও রাডার তৈরিতেও এগুলোর ব্যবহার অপরিসীম। চীন এই বাজারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। বিশ্বব্যাপী বিরল খনিজ উৎপাদন ও রপ্তানির ৬০–৭০ শতাংশই তাদের নিয়ন্ত্রণে। ভারত, যদিও বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম বিরল খনিজ রিজার্ভের অধিকারী, তবে দেশটির নিজস্ব চৌম্বক উৎপাদন নেই এবং চীনের ওপর নির্ভরশীল।
চীনের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার প্রভাব
চীন আকস্মিকভাবে বিরল চৌম্বক খনিজের রপ্তানি নিষিদ্ধ করলে ভারতের অটো ও ইলেকট্রনিক শিল্পে সরবরাহ ঘাটতি দেখা দেয়। এতে উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। সার রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার ফলে রবি মৌসুমে ডি-অ্যামোনিয়াম ফসফেটের সরবরাহে বড় প্রভাব পড়েছিল। টানেল বোরিং মেশিনের চালান আটকে যাওয়ায় বেশ কয়েকটি অবকাঠামো প্রকল্প স্থবির হয়ে পড়ে।
ভারতের প্রতিক্রিয়া ও কৌশলগত পদক্ষেপ
ভারত এই পরিস্থিতিতে চীনের ওপর নির্ভরতা কমানোর জন্য বিকল্প উৎস খুঁজতে শুরু করেছে। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই গত মাসে দুটি বৈঠক করেছেন। এই প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতায় অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা শিথিল করার সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে দুই দেশ।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ও প্রভাব
যুক্তরাষ্ট্র, ভারতের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার কারণে ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে। ফলে ভারতের পণ্যে মোট শুল্ক দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশ। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র চীনের প্রতি তুলনামূলকভাবে শিথিল নীতি নিয়েছে। ওয়াশিংটন বেইজিংয়ের সঙ্গে বাণিজ্যবিরতি নবায়ন করেছে, শুল্ক আরোপ ৯০ দিন পিছিয়েছে; সেই সঙ্গে চীনের কাছে উচ্চপ্রযুক্তির চিপ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার দিকেও অগ্রসর হয়েছে।
ভবিষ্যৎ সম্পর্কের সম্ভাবনা
ভারত ও চীনের সম্পর্কের উন্নতি দুই দেশের জন্যই লাভজনক হতে পারে। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের আমন্ত্রণে শাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের (SCO) শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন। এই সম্মেলনে দুই দেশের মধ্যে আরও সহযোগিতা ও সম্পর্কের উন্নতির সুযোগ তৈরি হতে পারে।
ভারত ও চীনের মধ্যে বিরল খনিজ, সার ও টানেল-বোরিং মেশিন রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত দুটি দেশের সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এই পদক্ষেপটি কেবল অর্থনৈতিক নয়, কৌশলগত দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। দুই দেশ যদি পারস্পরিক আস্থা ও সহযোগিতার ভিত্তিতে এগিয়ে চলে, তবে দক্ষিণ এশিয়ায় একটি শক্তিশালী ও স্থিতিশীল সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে।
MAH – 12424 , Signalbd.com