অর্থনীতি

মালয়েশিয়ার যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত: ক্রিপ্টোকারেন্সি এখন জাকাতের আওতায়

বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে মালয়েশিয়া ক্রিপ্টোকারেন্সিকে জাকাতের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। এ বিষয়ে মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) কুয়ালালামপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেন ফেডারেল টেরিটোরিজ ইসলামিক রিলিজিয়াস কাউন্সিলের অধীনস্থ জাকাত কালেকশন সেন্টারের প্রধান নির্বাহী দাতুক আবদুল হাকিম আমির ওসমান।

এই সিদ্ধান্ত ক্রিপ্টোকারেন্সিকে ইসলামী অর্থনীতির সাথে যুক্ত করার একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে বিবেচিত হচ্ছে। ক্রিপ্টোকারেন্সি বর্তমানে একটি দ্রুত বিকাশমান খাত, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন সম্ভাবনা তৈরি করছে।

মালয়েশিয়ায় ক্রিপ্টোকারেন্সির বর্তমান অবস্থা

মালয়েশিয়ায় ক্রিপ্টোকারেন্সি খাতে বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ফেডারেল টেরিটোরিজ ইসলামিক রিলিজিয়াস কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির মোট বিনিয়োগকারীদের ৫৪.২ শতাংশই এই খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিনিয়োগকারীদের বেশিরভাগের বয়স ১৮ থেকে ৩৪ বছরের মধ্যে। এই তরুণ প্রজন্মের হাতে রয়েছে প্রায় ১,৬০০ কোটি রিংগিতের (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪৩ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা) সমপরিমাণ সম্পদ।

দাতুক আবদুল হাকিম বলেন, “এই ক্রিপ্টো খাত জাকাত সংগ্রহের একটি সম্ভাবনাময় উৎস হতে পারে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের জন্য। বর্তমান যুগে অর্থনীতির ডিজিটাল পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের ধর্মীয় বিধানগুলোকেও আধুনিকায়ন করতে হবে।”

ক্রিপ্টোকারেন্সি জাকাতের আওতায় আনার পদ্ধতি

সম্প্রতি ফেডারেল টেরিটোরিজ ইসলামিক রিলিজিয়াস কাউন্সিলের ১৩৪তম সভায় ক্রিপ্টোকারেন্সিকে ব্যবসায়যোগ্য পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। অর্থাৎ, ক্রিপ্টোকারেন্সি থেকে অর্জিত মুনাফা এবং মালিকানাধীন সম্পদ উভয়কেই জাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে বিবেচনা করা হবে।

ক্রিপ্টোকারেন্সি হলো একটি ডিজিটাল বা ভার্চুয়াল মুদ্রা, যা ক্রিপ্টোগ্রাফির মাধ্যমে লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এটি কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে না থেকে ব্লকচেইন প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিচালিত হয়।

মালয়েশিয়ার ইসলামি আর্থিক ব্যবস্থায় নতুন দিগন্ত

মালয়েশিয়ার মোট জনসংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ৪৫ লাখ, যার মধ্যে ৬৩.৫ শতাংশ ইসলাম ধর্মাবলম্বী। দেশটির ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশ মুসলিম, যা এই সিদ্ধান্তকে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে।

জাকাত ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ, যা প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলিমের জন্য ফরজ। এটি মূলত সম্পদশালী মুসলিমদের দায়িত্ব, যা সমাজের দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের আর্থিক সহযোগিতায় কাজে লাগে। মালয়েশিয়ার এই পদক্ষেপ জাকাত সংগ্রহের ক্ষেত্রে নতুন সুযোগ তৈরি করবে।

দাতুক আবদুল হাকিম উল্লেখ করেন, “অর্থনীতি যেহেতু ডিজিটাল হচ্ছে, আমাদেরও ধর্মীয় বিধানগুলোর আধুনিকায়ন করতে হবে। ক্রিপ্টোকারেন্সিকে জাকাতের আওতায় আনার মাধ্যমে আমরা তরুণ প্রজন্মকে ইসলামী অর্থনীতির সঙ্গে আরও নিবিড়ভাবে যুক্ত করতে পারব।”

বিশ্বের ইসলামী অর্থনীতিতে এর প্রভাব

মালয়েশিয়ার এই পদক্ষেপ বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর জন্য একটি উদাহরণ হতে পারে। ক্রিপ্টোকারেন্সির মতো আধুনিক সম্পদকে জাকাতের আওতায় আনার মাধ্যমে ইসলামী অর্থনীতি একটি নতুন দিক পাবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্রিপ্টোকারেন্সির বৈশ্বিক বাজারের দ্রুত বৃদ্ধির ফলে এটি ইসলামী অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হয়ে উঠতে পারে। মালয়েশিয়ার মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো এ খাতকে কাজে লাগিয়ে তাদের আর্থিক ব্যবস্থায় বৈচিত্র্য আনতে পারবে।

মালয়েশিয়ার ক্রিপ্টোকারেন্সিকে জাকাতের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত ইসলামী অর্থনীতি ও আধুনিক প্রযুক্তির সংযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। এটি শুধু জাকাত সংগ্রহকে বাড়াবে না, বরং তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ধর্মীয় দায়িত্ব পালনেও উদ্বুদ্ধ করবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button