
সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় সুইদা শহরে বেদুইন ও দ্রুজ সম্প্রদায়ের মধ্যে চলমান সংঘর্ষের মধ্যেই ইসরায়েলি বাহিনী চালিয়েছে একাধিক বিমান হামলা। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী একে সিরিয়াকে ‘স্পষ্ট বার্তা’ বলে অভিহিত করেছেন।
হামলার মূল ঘটনা ও অবস্থান
সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় সুইদা শহরে সোমবার (১৪ জুলাই) সন্ধ্যায় একযোগে কয়েকটি বিমান হামলা চালায় ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী। সিরিয়ায় চলমান সাম্প্রদায়িক সহিংসতার মধ্যেই এই হামলা নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সিরিয়ার সরকারি বাহিনী যখন সুইদায় প্রবেশ করে, তখনই ইসরায়েলি বিমান ওই এলাকায় অভিযান শুরু করে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ) এখনো এই হামলার দায় স্বীকার করেনি, তবে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ও স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যে ইসরায়েলি জড়িত থাকার বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে উঠেছে।
সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার প্রেক্ষাপট
সুইদা অঞ্চলটি সিরিয়ার দ্রুজ সম্প্রদায়ের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। সম্প্রতি এই এলাকায় বেদুইন সুন্নি উপজাতি এবং দ্রুজ মিলিশিয়াদের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে অন্তত ৩০ জন নিহত ও বহু মানুষ আহত হন।
এই সহিংসতা থামাতে সিরিয়ার নতুন সরকার সেখানে সামরিক বাহিনী মোতায়েন করে। কিন্তু সরকারি বাহিনীর হস্তক্ষেপ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। প্রতিপক্ষের মধ্যে গোলাগুলিতে বহু সেনা হতাহত হয়।
ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া ও বার্তা
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ এক বিবৃতিতে বলেন, “এই হামলা সিরিয়ার শাসনব্যবস্থার জন্য একটি শক্ত বার্তা। আমরা সিরিয়ায় দ্রুজদের কোনো ধরনের ক্ষতি হতে দেব না।”
ইসরায়েল এর আগেও সিরিয়ার দ্রুজ সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল এবং এই সম্প্রদায়ের প্রতি একধরনের নৈতিক দায় অনুভব করে বলে দাবি করেছে। এ কারণেই সুইদায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ামাত্র তারা হস্তক্ষেপ করেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সিরিয়ার বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
গত ডিসেম্বরে সিরিয়ার দীর্ঘদিনের শাসক বাশার আল আসাদকে সরিয়ে ইসলামপন্থি বিদ্রোহীদের একটি জোট নতুন সরকার গঠন করে। এই সরকারকে ঘিরে সিরিয়াজুড়ে বিতর্ক ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এই সরকারের আমলেই ইসরায়েলের এই হামলা সংঘটিত হলো, যা এই সরকারের প্রতি ইসরায়েলের অবস্থান সম্পর্কেও একটি বার্তা বহন করছে।
লেবাননেও একযোগে হামলা
একই দিনে ইসরায়েল লেবাননের বেকা উপত্যকায় হিজবুল্লাহর ঘাঁটিতেও বিমান হামলা চালায়। অঞ্চলটি ইরান-সমর্থিত এই সশস্ত্র গোষ্ঠীর অন্যতম শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। লেবাননের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করতে ইসরায়েল ধারাবাহিকভাবে চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছে।
এই একযোগে হামলা শুধু সিরিয়াই নয়, বরং গোটা মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে তুলবে বলেই আশঙ্কা করছেন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েলের এই হামলা কেবল প্রতিরক্ষা নয়, বরং আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রণের অংশ হিসেবে দেখা উচিত। দ্রুজ সম্প্রদায়ের সঙ্গে ইসরায়েলের দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক রয়েছে, এবং তারা এই সম্পর্ককে ব্যবহার করে মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের প্রভাব বজায় রাখতে চায়।
একজন মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশ্লেষক বলেন,
“ইসরায়েল এবার সরাসরি হস্তক্ষেপের পথে গেছে। এটি কেবল সিরিয়া নয়, বরং সমগ্র অঞ্চলের জন্য উদ্বেগের বার্তা।”
সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনায় সিরিয়া, লেবানন ও ইসরায়েলের মধ্যকার উত্তেজনা নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যস্থতায় সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে সীমিত কূটনৈতিক আলোচনা শুরু হয়েছিল। কিন্তু এই বিমান হামলা সেই আলোচনার ভবিষ্যৎকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক শক্তিগুলোর এখন জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, নাহলে এই সংঘর্ষ আরও বড় রূপ নিতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জাতিসংঘের একজন প্রতিনিধি।
সারসংক্ষেপ
সিরিয়ার সুইদায় ইসরায়েলের এই হঠাৎ হামলা মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিকে আরও অনিশ্চয়তায় ফেলে দিয়েছে। সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, নতুন সরকার এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক—সবকিছু মিলে এই অঞ্চলটি এখন এক বিস্ফোরণযোগ্য পরিস্থিতির দিকে এগোচ্ছে।
তবে প্রশ্ন থেকে যায় — এই সংঘর্ষের আগুন কে নেভাবে? আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কি এবার কার্যকর ভূমিকা নেবে, নাকি আরও একটি যুদ্ধের দিকে এগোবে বিশ্ব?
এম আর এম – ০৩৫১, Signalbd.com