চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি: ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ৩০ বছর
বেইজিং সফরে বাংলাদেশের জন্য সুখবর নিয়ে এলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। ক্রেতার অগ্রাধিকারমূলক ঋণ (পিবিসি) এবং সরকারি ছাড়কৃত ঋণ (জিসিএল) পরিশোধের সময়সীমা ২০ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩০ বছর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চীন। পাশাপাশি ২০২৬ সালে এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উত্তরণের পরও বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত (ডিএফকিউএফ) প্রবেশাধিকার অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দেশটি।
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের মূল বিষয়বস্তু
মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) বেইজিংয়ের দিয়াওইউতাই স্টেট গেস্ট হাউসে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-র সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সুদের হার কমানোর অনুরোধ জানানো হয়। বর্তমানে এই ঋণের সুদের হার দুই থেকে তিন শতাংশ, যা এক শতাংশে নামানোর আহ্বান জানান তৌহিদ। একইসঙ্গে কমিটমেন্ট ফি (অঙ্গীকার মাশুল) মওকুফের প্রস্তাবও দেন তিনি।
ওয়াং ই বলেন, “বাংলাদেশের অনুরোধ বিবেচনা করা হবে।” এর পাশাপাশি চীন বাংলাদেশের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব আরও জোরদার করতে প্রস্তুত বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশি পণ্যের জন্য বিশেষ সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি
২০২৬ সালে বাংলাদেশ এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) ক্যাটাগরি থেকে বেরিয়ে যাবে। তবে এ উত্তরণের পরও বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের জন্য চীনের বাজারে শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার অব্যাহত থাকবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
স্বাস্থ্যসেবায় সহযোগিতা
বৈঠকে বাংলাদেশের অনুরোধে কুনমিংয়ে বাংলাদেশি নাগরিকদের উন্নত চিকিৎসার জন্য তিন থেকে চারটি অত্যাধুনিক হাসপাতাল নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে চীন। পাশাপাশি চীন বাংলাদেশে একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে, যা দুই দেশের বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে কাজ করবে।
অর্থনীতি ও অন্যান্য খাতে সহযোগিতা
বৈঠকে শিক্ষা, রেলওয়ে, কৃষি, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, মৎস্য, টেকসই জ্বালানি এবং সবুজ অর্থনীতিসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। এসব খাতে চীনের প্রযুক্তিগত সহায়তা ও বিনিয়োগ চায় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন
বাংলাদেশ-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তির এই সময়ে উভয় দেশ সম্পর্ক আরও গভীর করার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেন, “চীন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন দেখতে চায় এবং এর সার্বভৌমত্ব ও স্থিতিশীলতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল।”
তৌহিদ হোসেনের কর্মসূচি
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাও এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থার (সিডকা) চেয়ারম্যান লাও ঝাওহুইয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন তৌহিদ হোসেন।
এছাড়া সাংহাই ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজে (এসআইআইএস) একটি আলোচনায় অংশ নেবেন তিনি। সাংহাই চেম্বারের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় ও বৈদ্যুতিক গাড়ি, রোবোটিক্স এবং কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ বিষয়ক তিনটি কারখানা পরিদর্শন করবেন।
চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের এই কৌশলগত অংশীদারিত্ব উভয় দেশের উন্নয়নকে আরও গতিশীল করবে। ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানো, শুল্কমুক্ত সুবিধা বজায় রাখা, এবং বিভিন্ন খাতে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক দিক। চীন সফর থেকে বাংলাদেশের অর্জন দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করেছে।