
দেশের শেয়ারবাজারে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো। ব্র্যাক ব্যাংক, যেটি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ বেসরকারি ব্যাংক, তাদের বাজার মূলধন এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ১০০ কোটি ডলারের সীমানা প্রথমবার অতিক্রম করলো। এটি বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে কোন দেশীয় ব্যাংকের জন্যে এক বিরল ও ঐতিহাসিক কৃতিত্ব হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ব্র্যাক ব্যাংকের ঐতিহাসিক মাইলফলক: কীভাবে হয়েছে অর্জন?
ব্র্যাক ব্যাংক গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে শক্তিশালী আর্থিক প্রবৃদ্ধি ও সুনামের সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে। ব্যাংকটির বাজার মূলধনের এমন অগ্রগতি মূলত ব্যাংকের সুসংগঠিত করপোরেট সুশাসন, আধুনিক ব্যবস্থাপনা, আর্থিক সক্ষমতা ও গ্রাহকভিত্তিক সেবা বৃদ্ধির ফলাফল। দেশের শেয়ারবাজারে ব্লু-চিপ স্টক হিসেবে বিবেচিত ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারের দাম ধীরে ধীরে বেড়ে ২১ জুলাই ২০২৫ তারিখে ৬৩ টাকা ৭০ পয়সায় পৌঁছেছে।
এটি ১০ টাকা ফেস ভ্যালু বা অভিহিত মূল্যের শেয়ারের জন্য একটি বিশেষ উচ্চ মূল্য।
ব্র্যাক ব্যাংক নিজেই এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, এই অর্জন দেশের ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের অবিচল বিশ্বাস ও আস্থার প্রকাশ। ব্যাংকের করপোরেট সুশাসন, স্বচ্ছতা, আর্থিক সক্ষমতা এবং সেরা ক্রেডিট রেটিং পাওয়া এ অর্জনের পিছনের বড় কারণ।
বাজারে ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ার মালিকানা ও বিনিয়োগকারীদের অবস্থা
ব্র্যাক ব্যাংকের মোট ১৯৯ কোটি শেয়ার রয়েছে। এর মধ্যে ৪৬.১৭% শেয়ার রয়েছে পরিচালক ও স্পন্সরদের হাতে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশ ৩৩.৭৯% এবং স্থানীয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশ ১৩.২৮%। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পেয়ে থাকেন ৬.৭৬% শেয়ার।
এর মাধ্যমে দেখা যায়, ব্যাংকটির শেয়ার মালিকানা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ বণ্টন রয়েছে। এটি একটি শক্তিশালী বাজার বিশ্বাসের ইঙ্গিত দেয়।
ব্র্যাক ব্যাংকের আর্থিক সূচক ও প্রবৃদ্ধি
ব্র্যাক ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন ৫ হাজার কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ১ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা। ব্যাংকটি ধারাবাহিকভাবে সব গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সূচকে যেমন:
- আর্নিং পার শেয়ার (EPS)
- রিটার্ন অন ইকুইটি (ROE)
- রিটার্ন অন অ্যাসেট (ROA)
- নন-পারফর্মিং লোন (NPL)
- কর-পরবর্তী মুনাফা
এগুলোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি ও প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে।
ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীর বক্তব্য
ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী (চলতি দায়িত্বে) তারেক রেফাত উল্লাহ খান বলেন,
“বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাজার মূলধনে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করায় আমরা গর্বিত। এটি আমাদের শেয়ারধারী ও গ্রাহকদের অবিচল আস্থার পরিচায়ক। আমরা আমাদের করপোরেট সুশাসন ও আর্থিক সক্ষমতার মাধ্যমে টেকসই প্রবৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছি।”
তিনি আরও যোগ করেন,
“এই মাইলফলক আমাদের বিচক্ষণ আর্থিক ব্যবস্থাপনা, শক্তিশালী সুশাসন সংস্কৃতি এবং দীর্ঘমেয়াদি মূল্য সৃষ্টি ও সামাজিক দায়িত্ব পালনের প্রতিশ্রুতি স্পষ্ট করে। আমরা আমাদের শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষায় ও দেশের অর্থনীতির বিকাশে অবিরাম কাজ করে যাব।”
ব্র্যাক ব্যাংকের ইতিহাস ও বর্তমান অবস্থা
ব্র্যাক ব্যাংক ২০০১ সালে যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে দেশে ব্যাংকের ১৯১টি শাখা, ৯৪টি উপশাখা, ৩৩০টি এটিএম, ৪৪৬টি এসএমই ইউনিট অফিস, ১,১২১টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট ও প্রায় ৮ হাজার কর্মী রয়েছে। গ্রাহক সংখ্যা ১৮ লাখ ছাড়িয়েছে।
ব্র্যাক ব্যাংকের এই বিস্তৃত নেটওয়ার্ক এবং গ্রাহক সেবা সম্প্রসারণের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।
বাংলাদেশ শেয়ারবাজারে ব্র্যাক ব্যাংকের প্রভাব ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
ব্র্যাক ব্যাংকের বাজার মূলধন এক বিলিয়ন ডলার ছোঁয়া দেশের পুঁজিবাজারের জন্যও একটি শক্তিশালী বার্তা বহন করে। এটি দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি করে। আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের জন্যও বাংলাদেশকে একটি আকর্ষণীয় বিনিয়োগ কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোর কঠোর নীতিমালা মেনে ব্র্যাক ব্যাংক টেকসই ও দায়িত্বশীল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। দেশের আর্থিক খাতের উন্নয়নে এর ভূমিকা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি ব্র্যাক ব্যাংকের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ার মূল্য বৃদ্ধি ও বাজার মূলধনের এই ঐতিহাসিক মাইলফলক দেশের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করেছে। বাজারে ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারকে নিরাপদ ও লাভজনক বিনিয়োগ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারীরা ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ার ক্রয়ের মাধ্যমে লাভবান হচ্ছেন।
করপোরেট সুশাসন ও আর্থিক সাফল্যের মডেল ব্র্যাক ব্যাংক
ব্র্যাক ব্যাংকের সফলতার পেছনে রয়েছে কার্যকরী করপোরেট সুশাসন এবং স্বচ্ছতা। বাংলাদেশে অনেক প্রতিষ্ঠান এই মডেল অনুসরণ করছে।
ব্র্যাক ব্যাংকের উন্নত আর্থিক ব্যবস্থাপনা, ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ, দক্ষ মানবসম্পদ ও প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে ব্যাংকটি নিয়মিত সেরা ক্রেডিট রেটিং পেয়ে থাকে। এতে বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকের ওপর আরও বেশি আস্থা রাখেন।
ব্র্যাক ব্যাংকের সফলতা বাংলাদেশের অর্থনীতির মাইলফলক
ব্র্যাক ব্যাংকের বাজার মূলধন এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম একটি গৌরবময় অর্জন। এটি শুধু ব্র্যাক ব্যাংকের নয়, দেশের অর্থনীতির একটি শক্তিশালী ও ইতিবাচক সংকেত। এই সাফল্য প্রমাণ করে বাংলাদেশ আর্থিক খাতে প্রতিযোগিতামূলক এবং আধুনিক ব্যাংকিং সেবা প্রদানে সক্ষম।
আগামী দিনে ব্র্যাক ব্যাংক টেকসই উন্নয়ন, প্রযুক্তি আধুনিকীকরণ এবং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।
আপনি কি ব্র্যাক ব্যাংকের এই সাফল্যের বিষয়ে কী ভাবছেন? আপনার বিনিয়োগ পরিকল্পনায় এটি কী প্রভাব ফেলবে? নিচে মন্তব্য করে জানান।