অর্থনীতি

ঋণের টাকা ফেরত দেয়নি বাংলাদেশ, দাবি পাকিস্তানের

Advertisement

ইসলামাবাদের দাবি, কয়েক দশক আগে বাংলাদেশসহ পাঁচটি দেশ পাকিস্তান থেকে নেওয়া ঋণ এখনো ফেরত দেয়নি। পাকিস্তানের সরকারি অডিট রিপোর্টে উঠে এসেছে, মোট ৩০৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ আদায়ে দেশটি দীর্ঘ সময় ধরে ব্যর্থ হচ্ছে। এই ঋণের মধ্যে বাংলাদেশকেই পরিশোধ করতে হবে প্রায় ২১ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৬০ কোটি টাকারও বেশি।

পাকিস্তানের সরকারি অডিটে নতুন অভিযোগ

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫ সালের ১২ আগস্ট প্রকাশিত দেশটির সরকারি অডিট রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, ইরাক, সুদান এবং গিনি-বিসাউ পাকিস্তানের কাছ থেকে নেওয়া পুরনো ঋণ এখনো শোধ করেনি।
১৯৮০ ও ৯০-এর দশকে বাণিজ্যিক প্রকল্প, শিল্প স্থাপনা ও সরবরাহ খাতে এসব ঋণ প্রদান করা হয়েছিল। এর মধ্যে বাংলাদেশকে চিনি কারখানা ও সিমেন্ট প্রকল্পের জন্য এই ঋণ দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি করেছে পাকিস্তান।

কত টাকা বকেয়া, কার কাছে কত

অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী, পাঁচ দেশের কাছে মোট ৩০৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাওনা রয়েছে। এর মধ্যে সর্বাধিক পাওনা ইরাকের কাছে — ২৩১ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলার।
সুদানের কাছে ৪৬ দশমিক ৬ মিলিয়ন, বাংলাদেশের কাছে ২১ দশমিক ৪ মিলিয়ন এবং গিনি-বিসাউয়ের কাছে ৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার বকেয়া আছে। পাকিস্তানি মুদ্রায় মোট ঋণ এখন ৮৬ বিলিয়ন রুপিরও বেশি।

ঋণ আদায়ে ব্যর্থতার দীর্ঘ ইতিহাস

২০০৬-০৭ সালেই পাকিস্তানের অডিটর জেনারেল এই খেলাপি ঋণের বিষয়টি প্রথম প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু প্রায় দুই দশক পার হয়ে গেলেও ঋণ উদ্ধারে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি।
সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে একাধিকবার স্মারকপত্র ও নোটিশ পাঠানো হয়েছে। যৌথ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকও হয়েছে। কিন্তু খেলাপি দেশগুলো থেকে কোনো কার্যকর প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া বিষয়ে নীরবতা

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। অতীতে এমন অভিযোগ এলে ঢাকা সবসময় কূটনৈতিকভাবে বিষয়টি মোকাবিলা করেছে। তবে এইবার নতুনভাবে বিষয়টি প্রকাশিত হওয়ায় রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা শুরু হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতামত

আন্তর্জাতিক অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৪০ বছরের পুরনো ঋণ আদায় করা সাধারণত কঠিন, কারণ সময়ের সাথে সাথে চুক্তির শর্ত, রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আন্তর্জাতিক আইন পরিবর্তিত হয়।
কিছু বিশ্লেষকের মতে, পাকিস্তান বর্তমানে অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে, তাই পুরনো ঋণ আদায়ের বিষয়টি এখন সামনে নিয়ে আসছে। অন্যদিকে, অনেকের ধারণা, এই ধরনের দাবি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতও হতে পারে।

পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট

পাকিস্তান বর্তমানে মুদ্রাস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট এবং ঋণ পরিশোধের চাপের মধ্যে রয়েছে। দেশটির মুদ্রার মান দ্রুত কমে যাওয়ায় বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের বোঝা বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে পুরনো খেলাপি ঋণ আদায়কে তারা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে।

ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি কী হতে পারে

এই দাবি নিয়ে যদি দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হয়, তবে কূটনৈতিকভাবে সমাধানের পথ খোঁজা হবে। তবে রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিষয়টি আন্তর্জাতিক আদালতে গেলে প্রক্রিয়া আরও জটিল হবে।


পাকিস্তানের দাবি নতুন নয়, তবে এবার প্রকাশিত সরকারি অডিট রিপোর্টে বিস্তারিতভাবে তা উল্লেখ করায় বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানালে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ হবে। তবে দুই দেশের সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে এই দাবির সমাধান কূটনৈতিকভাবেই হওয়া সম্ভাবনা বেশি।

এম আর এম – ০৮৪৩, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button