রেমিট্যান্স ডলার সংগ্রহে ছোট এক্সচেঞ্জ হাউসের জন্য শর্ত শিথিল করলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক
রেমিট্যান্সের ডলার সংগ্রহে বড় এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর আধিপত্য কমাতে এবং বাজারকে আরও স্থিতিশীল করতে ছোট এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর জন্য শর্ত শিথিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রোববার (১৯ জানুয়ারি) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ পলিসি বিভাগ একটি সার্কুলার জারি করেছে। নতুন এই নীতিমালা কার্যকর হবে ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ থেকে।
শর্ত শিথিলের বিস্তারিত
এখন থেকে ছোট এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো সরাসরি যেকোনো ব্যাংকের কাছে রেমিট্যান্সের ডলার বিক্রি করতে পারবে। আগে এই সুযোগ নিতে হলে তাদের ১০,০০০ ডলার সিকিউরিটি ডিপোজিট এবং নন-রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি (এনআরএফসি) অ্যাকাউন্টে ন্যূনতম ব্যালেন্স রাখতে হতো। নতুন নীতিমালায় এই দুটি শর্তই বাতিল করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়েছে, “প্রি-ফান্ড পদ্ধতিতে সিকিউরিটি ডিপোজিট এবং ন্যূনতম ব্যালেন্সের শর্ত প্রত্যাহার করা হলো। ব্যাংকগুলোকে তাদের বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করার নির্দেশ দেওয়া হলো, যাতে করে রেমিট্যান্স প্রদানের মাধ্যমে এনআরএফসি অ্যাকাউন্টে সিকিউরিটি ডিপোজিট সমন্বয় করা যায়।”
ছোট এক্সচেঞ্জ হাউসের সমস্যা এবং নতুন সুবিধা
আগে ছোট এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর জন্য রেমিট্যান্স সংগ্রহের প্রক্রিয়ায় বড় প্রতিবন্ধকতা ছিল। যেকোনো ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেনের জন্য তাদের ১০,০০০ ডলার সিকিউরিটি ডিপোজিট দিতে হতো। যদি তারা একাধিক ব্যাংকের সঙ্গে কাজ করতে চাইতো, তবে এই অর্থের পরিমাণ আরও বাড়তো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, “ছোট এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর পক্ষে এত বড় পরিমাণ সিকিউরিটি ডিপোজিট রাখা অনেক সময় সম্ভব হতো না। ফলে তারা বড় এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করতে বাধ্য হতো। বড় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের আধিপত্য কাজে লাগিয়ে ডলারের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতো এবং বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হতো।”
নতুন নীতিমালার মাধ্যমে এই বাধা দূর হওয়ায় ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি ব্যাংকের সঙ্গে কাজ করতে পারবে এবং তাদের কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে।
বাজারে প্রভাব এবং সম্ভাবনা
নতুন নীতিমালার ফলে বড় এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর এগ্রিগেটর পদ্ধতির দৌরাত্ম্য কিছুটা কমবে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণে অনেক সময় প্রভাব বিস্তার করতো। ছোট এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো সরাসরি লেনদেন করতে পারলে বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়বে, যা ডলারের দাম স্থিতিশীল করতে সহায়ক হবে।
এগ্রিগেটরদের জন্য শর্ত শিথিল
নতুন নীতিমালায় এগ্রিগেটর এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর জন্যও কিছু শর্ত শিথিল করা হয়েছে। তাদের নন-রেসিডেন্ট টাকা (এনআরটি) অ্যাকাউন্টে ন্যূনতম ব্যালেন্সের শর্ত কমিয়ে ২৫,০০০ ডলারের সমপরিমাণ টাকা থেকে ২০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে তাদের জন্য সিকিউরিটি ডিপোজিটের শর্ত অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
রেমিট্যান্স সংগ্রহের পদ্ধতি
বর্তমানে ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্স সংগ্রহে দুটি পদ্ধতি অনুসরণ করে:
- প্রি-ফান্ড পদ্ধতি: এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো রেমিট্যান্সের ডলার সরবরাহ করার পর ব্যাংকগুলো টাকা প্রদান করে।
- পোস্ট-ফান্ড পদ্ধতি: ব্যাংকগুলো আগে টাকা প্রদান করে, পরে এক্সচেঞ্জ হাউস ডলার সরবরাহ করে।
ছোট এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো সাধারণত প্রি-ফান্ড পদ্ধতিতে কাজ করে। এই পদ্ধতিতে সিকিউরিটি ডিপোজিটের শর্ত তুলে নেওয়া তাদের জন্য বড় সুবিধা।
নতুন নীতিমালার ফলে রেমিট্যান্স খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসার আশা করা হচ্ছে। ছোট এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর জন্য এই সুবিধা তাদের কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করবে এবং বাজারে স্বচ্ছতা আনবে। এর পাশাপাশি ডলারের বাজারে প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি করে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও বৃদ্ধি করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
Latest News Of Signalbd.com