বিটকয়েনের নতুন রেকর্ড: ১.২০ লাখ ডলার অতিক্রম

বর্তমান ক্রিপ্টোকারেন্সির দুনিয়ায় আবারও এক নতুন মাইলফলক ছুঁয়েছে বিটকয়েন। ২০২৫ সালের ১৪ জুলাই সোমবার বিটকয়েনের মূল্য প্রথমবারের মতো ছুঁয়ে ফেলেছে অসাধারণ উচ্চতা—১ লাখ ২২ হাজার ৫৩১ মার্কিন ডলার। এই দাম পেরিয়ে গিয়ে বিটকয়েনের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় শুরু হলো। এর আগে কখনোই এই ডিজিটাল মুদ্রার মূল্য এত বেশি হয়নি।
সকালে কিছুটা দর কমলেও, বিটকয়েনের এই অভূতপূর্ব সাফল্য ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারে নতুন আশার আলো জ্বালিয়েছে। বিশেষ করে বিটকয়েনের বাজার মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ আরও বাড়ছে।
বিটকয়েনের দাম ও বাজার মূল্য: ঊর্ধ্বগামী প্রবণতা
কয়েক মাস ধরেই বিটকয়েনের দাম স্থিরভাবে বাড়ছে। গত সপ্তাহে এর দাম প্রায় ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, আর গত এক মাসে বেড়েছে প্রায় ১৬.৫ শতাংশ। আধা বছরের মধ্যে মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে ২৮.৮৫ শতাংশ। দীর্ঘ সময় ধরে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ায় বিটকয়েনের দাম গত এক বছরে বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি, যা ১০৬ শতাংশ। পাঁচ বছরের হিসাবে এই বৃদ্ধির হার প্রায় ১৬৯০ শতাংশ।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বিটকয়েনের দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনে রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ক্রমবর্ধমান আগ্রহ। বড় বড় সংস্থা ও বিনিয়োগকারী ক্রমাগত বড় পরিমাণে বিটকয়েন কিনছেন, যার ফলে বাজারে সরবরাহ সীমিত হচ্ছে। এরফলে দাম স্বাভাবিকভাবেই বাড়ছে।
বিটকয়েনের বাজার মূল্য: গুগল ও অ্যামাজনকেও পেছনে ফেলে
বিটকয়েনের বাজার মূলধন সোমবার ২ লাখ ৪১ হাজার কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। এই বাজার মূলধনের কারণে বিটকয়েন এখন বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান পঞ্চম সম্পদ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এমন অবস্থা যে, বিশ্বের প্রখ্যাত প্রযুক্তি জায়ান্ট গুগল ও অ্যামাজনকেও পেছনে ফেলে দিয়েছে বিটকয়েন।
দামের সঙ্গে সঙ্গে লেনদেনের পরিমাণও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সোমবার বিটকয়েন লেনদেন বেড়েছে ৩৩.১২ শতাংশ, যা ক্রিপ্টো মার্কেটের গতিশীলতার প্রমাণ দেয়।
অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি: ইথেরিয়ামসহ বাজারে সাফল্যের ধারা অব্যাহত
শুধু বিটকয়েন নয়, অন্যান্য বড় ক্রিপ্টোকারেন্সিও গতিশীল হয়ে উঠেছে। বাজারের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রিপ্টোকারেন্সি ইথেরিয়ামের দাম সোমবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২৮০ মার্কিন ডলার, যা ৩.২৮ শতাংশ বৃদ্ধি নির্দেশ করে।
বিশ্লেষকদের মতে, বিটকয়েনের এই ধারাবাহিক মূল্য বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, বিনিয়োগকারীদের নতুন আগ্রহ, এবং ক্রিপ্টো বাজারে প্রবেশ করা নতুন বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক প্রভাব ও কৌশলগত সিদ্ধান্ত
২০২৫ সালের মার্চ মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হওয়ার পর ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রতি তার মনোভাব এবং নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। এক নির্বাহী আদেশে তিনি ‘ক্রিপ্টোকারেন্সির কৌশলগত রিজার্ভ’ গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন।
এছাড়াও, ট্রাম্প প্রশাসন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ক্রিপ্টো-বান্ধব কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিয়েছে। যেমন, মার্কিন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) নতুন চেয়ারম্যান পল অ্যাটকিনস এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ডেভিড স্যাক্স হোয়াইট হাউসে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেয়ে ক্রিপ্টো বাজারে স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে কাজ করছেন।
ট্রাম্প পরিবারের ব্যবসাও ক্রিপ্টো জগতে প্রবেশ করেছে। তাদের মালিকানাধীন ট্রাম্প মিডিয়া অ্যান্ড টেকনোলজি গ্রুপ মার্কিন এসইসির কাছে একটি পরিকল্পনা জমা দিয়েছে, যেখানে বিটকয়েন ও অন্যান্য ডিজিটাল টোকেন নিয়ে বিনিয়োগের জন্য এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ড (ETF) চালুর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত ও ভবিষ্যৎ প্রবণতা
বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, বিটকয়েনের দাম এখন কিছুটা স্থিতিশীল সময় পার করবে। কারণ বর্তমানে বিনিয়োগকারীরা বড় ধরনের ঝুঁকি নিতে নারাজ, এবং ডলারের সূচক শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। তাছাড়া, ক্রিপ্টো বাজারের অনিশ্চয়তার সূচকও বর্তমানে স্থিতিশীল।
তবে, কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আবার বিটকয়েনের দাম ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলারের মধ্যে ওঠানামা করতে পারে। পরবর্তী সময়ে নতুন করে উত্থান শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজার: নতুন দিগন্ত ও বিনিয়োগের সুযোগ
বিটকয়েনের এই অভূতপূর্ব মূল্যবৃদ্ধি প্রমাণ করে ক্রিপ্টোকারেন্সি এখন আর শুধু ‘ডিজিটাল মুদ্রা’ নয়; এটি বিশ্বের আর্থিক ব্যবস্থায় একটি শক্তিশালী সম্পদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। ক্রিপ্টো প্রযুক্তির উন্নতি, বর্ণিল বিনিয়োগ বিকল্প এবং বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা বেড়ে যাওয়ার কারণে, বিনিয়োগকারীরা ক্রমেই এই দিকটিকে আরও গুরুত্ব দিচ্ছেন।
সিগনালবিডি’র বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্যও ক্রিপ্টো বাজারে বিনিয়োগের সুযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের নতুন উৎস হিসেবে এবং ডিজিটাল অর্থনীতির প্রসারের জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
বিটকয়েন কেনার আগে যা জানা জরুরি
তবে বিনিয়োগের আগে অবশ্যই ক্রিপ্টোকারেন্সির বৈশ্বিক ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন থাকা দরকার। মূল্য ওঠানামা স্বাভাবিক হলেও, বাজারে অনিশ্চয়তা বেশি থাকে। বিনিয়োগকারীদের উচিত সঠিক গবেষণা, বাজার বিশ্লেষণ এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করা।
সর্বোপরি, বিটকয়েন এবং অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি এখন আর শুধু প্রযুক্তি বা বিনিয়োগের বিষয় নয়, এটি একটি নতুন অর্থনৈতিক বাস্তবতা, যা বিশ্বের অর্থনীতিকে বদলে দিচ্ছে।
সংক্ষিপ্তসার
- বিটকয়েনের দাম সোমবার ছুঁয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৫৩১ মার্কিন ডলার।
- বাজার মূল্য ২ লাখ ৪১ হাজার কোটি মার্কিন ডলারে উন্নীত।
- বিটকয়েন বিশ্বের পঞ্চম সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ।
- ইথেরিয়ামসহ অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সিও উত্থানে।
- মার্কিন প্রশাসনের ক্রিপ্টো-বান্ধব নীতিমালা।
- ট্রাম্প পরিবারের ক্রিপ্টো বাজারে প্রবেশ।
- বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দাম কিছুদিন স্থিতিশীল থাকবে, পরে আবার বাড়বে।
- বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশে ক্রিপ্টো বিনিয়োগের সম্ভাবনা উজ্জ্বল।
সিগনালবিডি ডট কম
আপনার ক্রিপ্টো ও বাণিজ্য সংবাদ উৎস। আমাদের সাথে থাকুন, বিশ্ব অর্থনীতির সব খবর পেতে।