রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নতুন শান্তি প্রস্তাবের শর্তগুলোতে কিয়েভের প্রতিক্রিয়া, দনবাস ত্যাগ ও ন্যাটো আকাঙ্ক্ষা স্থগিতসহ তিনটি প্রধান দাবি রয়েছে
ইউক্রেনের দনবাস ত্যাগ শর্তে পুতিনের নতুন প্রস্তাব
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুদ্ধ সমাপ্তির সম্ভাবনা নিয়ে নতুন শর্ত তুলে ধরেছেন। আন্তর্জাতিক সূত্রের বরাতে জানা গেছে, পুতিনের প্রস্তাবে মূলত ইউক্রেনকে দনবাসের যে অংশ এখনও নিয়ন্ত্রণে আছে, তা সম্পূর্ণভাবে রাশিয়ার হাতে ছেড়ে দিতে হবে। এই প্রস্তাবের অন্য দুটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করতে হবে এবং দেশটিতে কোনো পশ্চিমা সেনা মোতায়েন করা যাবে না।
ক্রেমলিনের উচ্চপর্যায়ের তিনটি সূত্রের বরাতে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুতিনের এই প্রস্তাবকে কিয়েভ ‘আত্মসমর্পণ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। ইউক্রেন সরকার এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বলেছে, এটি তাদের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যায়।
আলাস্কায় ট্রাম্প-ও-পুতিন বৈঠকের প্রেক্ষাপট
গত ১৫ আগস্ট আলাস্কায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ নেতারা প্রথমবারের মতো চার বছরের বেশি সময় পর সরাসরি আলোচনা করেছেন। তিন ঘণ্টার ওই বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধের সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে আলোচনার তথ্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো নিশ্চিত করেছে।
বৈঠক শেষে পুতিন আশা প্রকাশ করেছিলেন যে, এটি ইউক্রেনে শান্তির পথ খুলে দিতে পারে। তবে বৈঠকে কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, তা উভয় নেতা বিস্তারিতভাবে জানাননি।
২০২৪ সালের জুনে পুতিন চারটি প্রদেশ (দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝিয়া) রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রাখার দাবি করেছিলেন। বর্তমানে তার প্রস্তাব শুধুমাত্র দনবাস অঞ্চলে সীমাবদ্ধ। সূত্রগুলো বলছে, সম্ভাব্য সমঝোতার অংশ হিসেবে রাশিয়া খারকিভ, সুমি ও দনিপ্রোপেত্রভস্ক অঞ্চলের কিছু ছোট অংশ ফিরিয়ে দিতে রাজি।
মার্কিন বিশ্লেষকদের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে রাশিয়া দনবাসের প্রায় ৮৮ শতাংশ এবং জাপোরিঝিয়া ও খেরসনের প্রায় ৭৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে।
কিয়েভের প্রতিক্রিয়া
পুতিনের নতুন প্রস্তাবকে কিয়েভ আত্মসমর্পণ বলে আখ্যায়িত করেছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, দেশ তাদের সার্বভৌমত্বের জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই শর্তগুলো পূরণ করলে ইউক্রেনের ভূ-রাজনৈতিক স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়বে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ
পুতিনের প্রস্তাবের পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা মন্তব্য করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুদ্ধ সমাপ্তির জন্য এখনো কোনো বাস্তব চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে সমর্থন অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
একজন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেছেন, “পুতিনের শর্তগুলো বাস্তবায়ন হলে ইউক্রেনের স্বাধীনতা সীমিত হবে। এটি এক ধরনের রাজনৈতিক আত্মসমর্পণ হিসেবে দেখা যেতে পারে।”
সম্ভাব্য প্রভাব
যদি ইউক্রেন এই শর্তগুলো গ্রহণ করে, তাহলে দনবাসের বর্তমান ফ্রন্টলাইন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে যাবে। এছাড়াও ন্যাটোর দিকে ইউক্রেনের আকাঙ্ক্ষা বন্ধ হয়ে যাবে এবং দেশটিতে কোনো পশ্চিমা সেনা মোতায়েন করা যাবে না। এতে ইউক্রেনের নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক সমর্থনের দিক থেকে বড় প্রভাব পড়তে পারে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পরিস্থিতি ভবিষ্যতে ইউক্রেনের কূটনৈতিক অবস্থানকে আরও জটিল করে তুলবে। তবে ইউক্রেন সরকার দৃঢ়ভাবে তাদের অবস্থান ধরে রেখেছে।
পরবর্তী ধাপ
বিশ্লেষকদের মতে, পরিস্থিতি কীভাবে মোড় নেবে তা পুরোপুরি নির্ভর করছে ইউক্রেন ও রাশিয়ার পরবর্তী প্রতিক্রিয়ার উপর। যুদ্ধ সমাপ্তি ও শান্তি স্থাপনের পথে আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
এম আর এম – ০৯৯০, Signalbd.com



