মানুষের আত্মশক্তির বিকাশ ঘটাতে চাইতেন আনিসুর রহমান, স্মরণসভায়

বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে বাঙলার পাঠশালা, রিব ও এএলআরডি আয়োজিত আনিসুর রহমান স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অর্থনীতিবিদ আনিসুর রহমান মানুষের আত্মশক্তির বিকাশ ঘটাতে চাইতেন। সে জন্য তিনি ছাত্রদের নিয়ে সরাসরি গ্রামে চলে যেতেন এবং কৃষকদের কাছ থেকে শিখতেন। পরবর্তী জীবনে তিনি পার্টিসিপিটরি অ্যাকশন রিসার্চ বা গণগবেষণার তত্ত্ব নিয়ে আসেন, যার উদ্দেশ্য ছিল মানুষের ক্ষমতায়ন।
উন্নয়ন নিয়ে তাঁর চিন্তা ছিল অর্থনীতির প্রচলিত ধারণার বাইরে। তিনি উন্নয়নকে কেবল অবকাঠামো নির্মাণ ও জিডিপি প্রবৃদ্ধির মধ্যে সীমাবদ্ধ ভাবতেন না। বরং কীভাবে মানুষের মুক্তির পথ উন্মোচন করা যায়, সেটাই ছিল তাঁর লক্ষ্য। তিনি বিশ্বাস করতেন, মানুষকে সুযোগ দেওয়া হলে তারা নিজেরাই পথ তৈরি করে নেবে।
স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাজ্যের অলস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এস আর ওসমানী। প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাঙলার পাঠশালার সভাপতি ও প্রতিষ্ঠাতা আহমেদ জাভেদ।
অধ্যাপক এস আর ওসমানী বলেন, আনিসুর রহমান তত্ত্বীয় অর্থনীতিবিদ হিসেবে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছিলেন। তাঁর পিএইচডি গবেষণা এমন গাণিতিক ভিত্তির ওপর করা হয়েছিল, যা সে সময় অর্থনীতিতে নতুনভাবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। অমর্ত্য সেনের মতে, আনিসুর রহমান যদি তত্ত্বীয় গবেষণা চালিয়ে যেতেন, তাহলে তিনি অমর্ত্য সেনের আগেই নোবেল পুরস্কার পেতে পারতেন।
অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান ও মাহবুব উল্লাহ স্মৃতিচারণা করেন। রেহমান সোবহান বলেন, আনিসুর রহমান যা করতেন, তা তীব্র আবেগ থেকে করতেন। তিনি তরুণদের শিক্ষাদানে আগ্রহী ছিলেন এবং সমাজ পরিবর্তনের জন্য তাদের উৎসাহিত করতেন।
মাহবুব উল্লাহ বলেন, আনিসুর রহমান প্রথাগত সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করতেন না; বরং মানুষের মনোজগতের পরিবর্তনের ওপর গুরুত্ব দিতেন। গণগবেষণার ধারণা সম্পর্কে তিনি মাও সে-তুংয়ের ‘লার্ন ফ্রম পিপল’ ধারণা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, আনিসুর রহমানের বই পড়ে তিনি শিখেছেন, কারও কাছে সাহায্যের জন্য হাত না বাড়িয়ে নিজের সম্পদ দিয়ে উন্নয়ন করা সম্ভব। তিনি উল্লেখ করেন, স্বাধীনতার পর আনিসুর রহমান বঙ্গবন্ধুকে সচিবদের গাড়ি ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছিলেন, যদিও সেটি গ্রহণ করা হয়নি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রওনক জাহান, অর্থনীতিবিদ নজরুল ইসলাম, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা এবং রিবের চেয়ারম্যান শামসুল বারি। বক্তারা বলেন, আনিসুর রহমান সব সময় তরুণদের ভাবতে উৎসাহিত করতেন এবং শিক্ষক হিসেবে ছাত্রবান্ধব ছিলেন।
আনিসুর রহমান ভূমি সংস্কার নিয়ে সোচ্চার ছিলেন এবং তাঁর গবেষণা ও চিন্তা বাস্তবায়নে কাজ করছে এএলআরডি। রিব তাঁর গণগবেষণা তত্ত্ব ও অন্যান্য চিন্তা সৃজনশীলভাবে প্রয়োগ করছে।
বক্তারা নতুন প্রজন্মের তরুণদের আনিসুর রহমানের চিন্তার সঙ্গে পরিচয় করানোর আহ্বান জানান। তাঁরা বলেন, চিন্তার দাসত্ব না ভাঙলে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে না।
অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও আনিসুর রহমানের অনুরাগীরা উপস্থিত ছিলেন।