নতুন করছাড় ২০২৫: আয়কর রিটার্নের ৫টি বড় পরিবর্তন

বাংলাদেশের করদাতাদের জন্য এই অর্থবছরে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় এসেছে নতুন কিছু করছাড় ও সুবিধার ঘোষণা। ১ জুলাই থেকে শুরু হয়ে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সময় পাওয়া যাবে বার্ষিক আয়কর রিটার্ন জমা দিতে। তবে করমুক্ত আয়সীমা যেভাবে আগের বছরেই সাড়ে তিন লাখ টাকা নির্ধারণ হয়েছিল, এবার সেই সীমায় কোনও পরিবর্তন হয়নি। তার বদলে বাজেটে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ করছাড়ের ঘোষণা এসেছে, যেগুলো রিটার্ন জমার সময় করদাতাদের বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে।
এই প্রতিবেদনে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব—কোন ৫টি খাতে পরিবর্তন এসেছে, কীভাবে এসব করছাড় আপনার ওপর প্রভাব ফেলবে, এবং কর রিটার্নে এগুলোকে কীভাবে সঠিকভাবে প্রতিফলিত করবেন।
১. ভাইবোনের দান সম্পূর্ণ করমুক্ত
আগের বছর পর্যন্ত ভাইবোনদের মধ্যে দানকৃত অর্থ বা সম্পদের উপর কর ছিল। তবে এবার বাজেটে এটি সম্পূর্ণ করমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থাৎ, আপনি যদি আপনার ভাই বা বোনকে জমি, ফ্ল্যাট বা অর্থ দান করেন, তা থেকে কোনো কর দিতে হবে না। এমনকি বিদেশে থাকা ভাইবোনের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থ-সম্পদও করমুক্ত থাকবে।
এই পদক্ষেপ পারিবারিক সম্পত্তি হস্তান্তরকে সহজ ও ঝামেলামুক্ত করবে এবং অনেকের জন্য দীর্ঘদিনের ট্যাক্স বোঝা থেকে মুক্তির সুযোগ তৈরি করবে।
২. কৃষিকাজ থেকে আয়ের করছাড় বৃদ্ধি
বাংলাদেশে শহরাঞ্চলেও কৃষিকাজে ঝোঁক বাড়ছে। অনেকেই লিজ নিয়ে জমিতে শাকসবজি উৎপাদন করছেন। এই কৃষি আয়ের ওপর করমুক্তির সীমা এবার পাঁচ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ, কৃষিকাজ থেকে যারা আয় করেন, তাদের পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত থাকবে।
এটি বাণিজ্যিক কৃষি উৎসাহিত করতে সরকারের একটি বড় উদ্যোগ, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
৩. বেসরকারি চাকরিজীবীদের করযোগ্য আয় গণনায় ছাড়
আগের বছর বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য বিভিন্ন ভাতা ও সুবিধা মিলিয়ে সাড়ে চার লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করযোগ্য আয়ের থেকে বাদ দেওয়া যেত। এবার সেই পরিমাণ পাঁচ লাখ টাকা করা হয়েছে।
এর মানে হলো বেসরকারি চাকরিজীবীরা এখন আরও বেশি পরিমাণ আয় করযোগ্য আয়ের বাইরে রাখতে পারবেন। এতে করমুক্ত আয় বৃদ্ধি পাবে এবং হাতে অবশিষ্ট অর্থও বাড়বে।
৪. পেনশনের আয়ের ওপর করমুক্তি
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের আয় এবং সর্বজনীন পেনশন স্কিম থেকে প্রাপ্ত পেনশন সুবিধা থেকে পাওয়া আয়ের ওপর কর আরোপ করা হবে না। বর্তমান সময় প্রায় ১ লক্ষ ৮০ হাজার গ্রাহক এই স্কিমে আছেন।
পেনশনভোগীদের জন্য এটি অত্যন্ত স্বস্তিদায়ক খবর, কারণ দীর্ঘমেয়াদে তাদের আয়ের স্থিতিশীলতা ও করমুক্ত সুবিধা নিশ্চিত হবে।
৫. মরণব্যাধির চিকিৎসা খরচ করমুক্ত
চাকরিজীবী করদাতাদের জন্য সবচেয়ে বড় উপকারের মধ্যে একটি হলো মরণব্যাধির চিকিৎসার খরচ করমুক্ত ঘোষণা। কিডনি, লিভার, ক্যানসার, হার্ট, মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার ও কৃত্রিম অঙ্গ প্রতিস্থাপনসহ মারাত্মক অসুস্থতার চিকিৎসার ব্যয় করমুক্ত হবে।
চিকিৎসায় প্রায়ই কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয়, তাই এই করছাড়ের ফলে পেশাজীবীরা বড় ধরনের আর্থিক বোঝা থেকে মুক্তি পাবেন।
আয়কর রিটার্নে নতুন করছাড় কিভাবে প্রযোজ্য করবেন?
- রিটার্ন ফর্মে সঠিক তথ্য দিন: ভাইবোনদের দান, কৃষিকাজ থেকে আয়, পেনশন ও চিকিৎসার খরচের করছাড় অবশ্যই সঠিকভাবে উল্লেখ করতে হবে।
- দলিল ও প্রমাণপত্র রাখুন: বিশেষত দান ও চিকিৎসা খরচের ক্ষেত্রে প্রমাণপত্র সংরক্ষণ জরুরি।
- নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জমা দিন: ১ জুলাই থেকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন জমা দিতে হবে, দেরি করলে জরিমানা হতে পারে।
- কর পরামর্শ নিন: প্রয়োজনে কর বিশেষজ্ঞ বা CA থেকে সাহায্য নিন যাতে সঠিক করছাড় পাওয়ায় কোনো ভুল না হয়।
কেন এই করছাড়গুলো গুরুত্বপূর্ণ?
বাংলাদেশের অর্থনীতি যখন দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে, তখন করনীতি দিক থেকে সুবিধা দিলে সাধারণ মানুষের জীবনে তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব পড়ে। এই করছাড়গুলো:
- পরিবার ও প্রিয়জনের মধ্যে অর্থ লেনদেন সহজতর করবে।
- কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নে সহায়তা করবে।
- চাকরিজীবীদের আয় ও সঞ্চয় বৃদ্ধি করবে।
- দীর্ঘমেয়াদে পেনশনের গুরুত্ব বাড়াবে।
- গুরুতর অসুস্থতার চিকিৎসায় আর্থিক চাপ কমাবে।
করছাড় সম্পর্কিত অতিরিক্ত তথ্য
- করমুক্ত আয়সীমা: যদিও আয়করমুক্ত সীমা অপরিবর্তিত থাকলেও করছাড়ের ফলে করযোগ্য আয় কমে আসবে।
- আর্থিক সুরক্ষা: এই করছাড়গুলো মানুষকে আয়ের বিভিন্ন উৎস থেকে করমুক্ত থাকতে সহায়তা করে।
- ট্যাক্স কমপ্লায়েন্স: সঠিক করছাড় জানা ও প্রয়োগ করদাতাদের ট্যাক্স কমপ্লায়েন্স সহজ করবে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য সরকার নতুন পাঁচটি করছাড় ঘোষণা করেছে, যা করদাতাদের জন্য সুখবর। ভাইবোনের দান, কৃষিকাজ থেকে আয়, বেসরকারি চাকরিজীবীদের ভাতা ও আয় বাদ, পেনশন এবং মারাত্মক অসুস্থতার চিকিৎসার খরচ করমুক্ত রাখার মাধ্যমে জনগণের ওপর করের বোঝা কমানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
আপনি যদি এই সুবিধাগুলো সম্পর্কে অবগত না থাকেন বা সঠিকভাবে প্রয়োগ না করেন, তাহলে অর্থনৈতিকভাবে সুযোগ হাতছাড়া হতে পারে। তাই রিটার্ন জমার আগে এই পরিবর্তনগুলো ভালোভাবে বুঝে নেওয়া জরুরি।