অর্থনীতি

বিকাশ, রকেট, নগদসহ এমএফএস-এর মাধ্যমে শুল্ক-কর জমা দেওয়া যাবে অনলাইন

বাংলাদেশে আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্ক ও কর পরিশোধ প্রক্রিয়ায় বড় পরিবর্তন এসেছে। সরকারি অর্থ বিভাগের উদ্যোগে ‘এ চালান’ বা অটোমেটেড চালান সিস্টেম চালু হয়েছে, যার মাধ্যমে এখন থেকে আমদানিকারক, রপ্তানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ প্রতিনিধি ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনলাইনে শুল্ক-কর জমা দিতে পারবেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, তারা এখন ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের পাশাপাশি বিকাশ, রকেট, নগদ, উপায়, এমক্যাশ, ট্রাস্টপে সহ বিভিন্ন মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) ব্যবহার করে কর পরিশোধ করতে পারবেন।

‘এ চালান’ সিস্টেম: এক নতুন যুগের শুরু

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ যৌথভাবে পরিচালিত ‘এ চালান’ সিস্টেম একটি ওয়েবভিত্তিক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, যা আমদানিকারক, রপ্তানিকারক এবং সিঅ্যান্ডএফ প্রতিনিধিদের শুল্ক-কর দ্রুত, নিরাপদ ও সুষ্ঠুভাবে অনলাইনে পরিশোধের সুযোগ করে দিয়েছে। এই সিস্টেমের মাধ্যমে এখন ঘরে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে সরাসরি সরকারি কোষাগারে অর্থ জমা দেওয়া যাবে।

শুল্ক-কর জমা দেওয়ার পর সিস্টেম থেকে একটি স্বয়ংক্রিয় রসিদ নম্বর জেনারেট হবে, যা ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পণ্য দ্রুততম সময়ে বন্দরে খালাস করতে পারবে। আর এই পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে প্রথাগত কাগজপত্রহীন, দ্রুত ও ঝামেলামুক্ত পদ্ধতিতে।

মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের অন্তর্ভুক্তি: করদাতাদের জন্য সহজতর

বাংলাদেশে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) ব্যাপক জনপ্রিয়তা বিবেচনায় এনবিআর এই সিস্টেমে বিকাশ, রকেট, নগদ, উপায়, এমক্যাশ, ট্রাস্টপে ইত্যাদি এমএফএস গেটওয়েগুলো অন্তর্ভুক্ত করেছে। এর ফলে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে, যেকোনো সময়, যেকোনো মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী শুল্ক-কর জমা দিতে পারবেন।

এখন থেকে ব্যাংক অফিসে গিয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা কিংবা শাখায় গিয়ে জটিলতা ভোগ করার প্রয়োজন নেই। বিশেষ করে ছোট ব্যবসায়ীরা ও আমদানিকারক-রপ্তানিকারকরা এ সুবিধা থেকে বেশ উপকৃত হবেন।

শুল্ক-কর পরিশোধে দ্রুততম ব্যবস্থা

বর্তমানে বিদ্যমান ব্যবস্থায় করদাতারা নির্দিষ্ট সময়ে আরটিজিএস (RTGS) পদ্ধতিতে অর্থ জমা দিয়ে থাকেন, যেখানে সরকারি কোষাগারে অর্থ জমা হতে কয়েকদিন সময় লাগে। এতে সরকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয় এবং পণ্য খালাসে বিলম্ব ঘটে।

‘এ চালান’ সিস্টেম চালু হওয়ার ফলে এই সমস্যা দূর হয়েছে। এখন যেকোনো সময়, যেকোনো জায়গা থেকে অনলাইনে অর্থ জমা দিলে তা তাৎক্ষণিকভাবে সরকারি কোষাগারে পৌঁছে যাবে। এর ফলে সরকারের নগদ অর্থ তৎক্ষণাৎ খরচের সুযোগ পাবার পাশাপাশি আমদানি-রপ্তানির পণ্য খালাস প্রক্রিয়া অনেক দ্রুততর হয়েছে।

কোথায় থেকে শুরু হলো ‘এ চালান’?

২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে কমলাপুর আইসিডি কাস্টমস হাউসে ‘এ চালান’ পদ্ধতির পাইলটিং শুরু হয়। এরপর পানগাঁও কাস্টমস হাউসেও এটি কার্যকর করা হয়। সর্বশেষ, গত বৃহস্পতিবার থেকে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে এই সেবা চালু করা হয়েছে।

আগামী সোমবার থেকে ঢাকাসহ দেশের সব কাস্টমস হাউসে এই সিস্টেম বাস্তবায়ন করা হবে। এর ফলে পুরো দেশে আমদানি-রপ্তানি শুল্ক-কর পরিশোধের প্রক্রিয়া একধাপ এগিয়ে যাবে।

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রভাব

এই নতুন ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম বাংলাদেশ অর্থনীতির ডিজিটাল রূপান্তরের বড় দিক নির্দেশ করছে। এটি সরকারের রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থাকে আরও স্বচ্ছ, দ্রুত ও ঝামেলামুক্ত করেছে। ব্যবসায়ীরা সময় ও শ্রমের বড় সঞ্চয় করতে পারবে, পাশাপাশি সরকারের জন্য রাজস্ব আদায়ের গতি বৃদ্ধি পাবে।

শুল্ক-কর আদায়ের এই উন্নত প্রযুক্তি দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা এনে দেবে এবং আমদানি-রপ্তানি খাতের কার্যক্রমে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে। এতে পণ্য আমদানির সময় হ্রাস পাবে, ফলে ব্যবসায়ীরা দ্রুত পণ্য পরিবহন ও বাজারজাত করতে পারবেন।

করদাতাদের জন্য নির্দেশিকা ও নিরাপত্তা

এনবিআর জানিয়েছে, এই সিস্টেমের মাধ্যমে করদাতারা নিরাপদে অর্থ পরিশোধ করতে পারবেন। কার্ড ও এমএফএস গেটওয়ে সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে। করদাতাদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, শুধুমাত্র অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ও নির্ভরযোগ্য গেটওয়ে ব্যবহার করতে।

এছাড়া, কর পরিশোধের পর যেকোনো ধরণের অসঙ্গতি বা সমস্যা হলে এনবিআর ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

সার্বিক সুবিধাসমূহ

  • অনলাইনে ঘরে বসেই শুল্ক-কর জমা দেওয়ার সুবিধা
  • বিকাশ, রকেট, নগদসহ বিভিন্ন এমএফএস থেকে সহজে অর্থ প্রদান
  • ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড গ্রহণযোগ্য
  • সময় ও শ্রম বাঁচানো
  • পণ্যের দ্রুত খালাস নিশ্চিত করা
  • সরকারি কোষাগারে অর্থ দ্রুত জমা হওয়া
  • ব্যবসায়িক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি
  • দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব

বাংলাদেশ সরকারের ডিজিটাল অর্থনীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ‘এ চালান’ পদ্ধতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিকাশ, রকেট, নগদ ও অন্যান্য মোবাইল পেমেন্ট সিস্টেম অন্তর্ভুক্ত করে শুল্ক-কর জমা দেওয়ার সুবিধা দেশের আমদানি-রপ্তানি খাতকে আরও দক্ষ ও আধুনিক করেছে। ব্যবসায়ীরা ও করদাতারা এবার ঘরে বসেই দ্রুত এবং ঝামেলামুক্ত পদ্ধতিতে শুল্ক-কর পরিশোধ করতে পারবেন।

আসছে দিনগুলোতে এই সিস্টেম দেশের বাণিজ্যিক খাতের জন্য একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন হিসেবে বিবেচিত হবে, যা অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন ধারা সৃষ্টি করবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button