সবজির দাম ৬০-৮০ টাকার ওপর, চাল-মাছ-মুরগির দাম স্থিতিশীল

দেশের কাঁচাবাজারে সবজির দাম গত কয়েক সপ্তাহে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। অধিকাংশ সবজির প্রতি কেজির দাম এখন ৬০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করছে। অন্যদিকে, চালের দাম ঈদের পর থেকে স্থিতিশীল থাকলেও, বেশ কিছু শাকসবজি ও সবজির দাম ক্রমেই বাড়ছে। মুরগি ও মাছের দাম সামগ্রিকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে।
রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন বাজার ঘুরে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে সবজির দাম বেড়ে প্রায় ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পরিস্থিতি দেশের সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতায় প্রভাব ফেলছে এবং বাড়ছে দৈনন্দিন জীবনের খরচ।
সবজির বাজার: দাম বৃদ্ধির কারণ ও বর্তমান অবস্থা
ঢাকার মোহাম্মদপুর, আদাবর, কৃষি মার্কেট, টাউন হল বাজার ও কারওয়ানবাজারের খোঁজে জানা গেছে, সবজির কেজি দামে তীব্র ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে ঝিঙে, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল, বরবটি, কাঁকরোল এবং বেগুনের দাম এখন কেজিতে ৬০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে।
দাম বৃদ্ধির বিস্তারিত:
- ঝিঙে, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল: ৬০-৮০ টাকা (আগে ছিল ৪০-৫০ টাকা)
- বরবটি, কাঁকরোল: ৮০-১০০ টাকা (১০-২০ টাকা বেড়েছে)
- বেগুন: ৮০-১০০ টাকা (প্রায় ২০ টাকা বৃদ্ধি)
- টমেটো, করলা, ঢ্যাঁড়স, লাউ, কচুর লতি: ৬০-৮০ টাকার মধ্যে
একই সময়ে, পেঁপে ও মিষ্টিকুমড়াসহ কয়েকটি সবজির দাম ৫০ টাকার নিচে হলেও সংখ্যা কম। পাইকারি বাজারগুলোতে দাম কিছুটা কম থাকলেও খুচরা বাজারে দাম বেশি। বিশেষত শুক্রবার দাম অন্যান্য দিনের তুলনায় কিছুটা বৃদ্ধি পায়।
মৌসুম নয় এমন সবজির দাম আকাশচুম্বী
বাজারে শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি ও ধনেপাতার দাম এখনো খুব বেশি। যেহেতু এখন মৌসুম নয়, তাই এই সব সবজির দাম বেশি হওয়া স্বাভাবিক।
- শিম: ৩০০-৪০০ টাকা প্রতি কেজি
- ধনেপাতা: ৩৫০-৪০০ টাকা প্রতি কেজি
- ফুলকপি, বাঁধাকপি: ৮০-১০০ টাকা প্রতি কেজি
চালের দাম স্থিতিশীল, খুচরা বাজারে দাম বেড়েছে
তিন সপ্তাহ ধরে চালের দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে স্থিতিশীল রয়েছে। বিশেষ করে মিনিকেট চালের দাম ঈদের পর থেকে বাড়ছে।
- মিনিকেট চাল: ৮০-৮৫ টাকা প্রতি কেজি (ঈদের আগে ছিল ৭৫-৭৬ টাকা)
- মোজাম্মেল ব্র্যান্ড: ৮৫-৯০ টাকা প্রতি কেজি
- স্বর্ণা চাল: ৫৫-৫৮ টাকা প্রতি কেজি
- ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯: ৬০-৬২ টাকা প্রতি কেজি
খুচরা বাজারে চালের দাম বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের খাদ্যব্যয় বেড়েছে।
আমিষজাতীয় পণ্যের বাজার পরিস্থিতি
মাছ, মুরগি ও মাংসের দাম মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে। তবে ক্রেতাদের জন্য এই দামও এখনো বেশ চ্যালেঞ্জিং।
- সোনালি মুরগি: ৩০০ টাকা প্রতি কেজি
- ব্রয়লার মুরগি: ১৫০-১৬০ টাকা প্রতি কেজি
- ডিম (প্রতি ডজন): ১২০ টাকা
- গরুর মাংস: ৭০০-৮০০ টাকা প্রতি কেজি
- খাসির মাংস: ১,১০০ টাকা প্রতি কেজি
- চাষের রুই মাছ: ৩৮০-৪৫০ টাকা প্রতি কেজি
- তেলাপিয়া: ২৫০-২৮০ টাকা প্রতি কেজি
- পাঙাশ: ২০০-২৫০ টাকা প্রতি কেজি
- কই মাছ: ২৮০-৩০০ টাকা প্রতি কেজি
- পাবদা ও শিং মাছ: ৪০০-৫০০ টাকা প্রতি কেজি
ডালের দাম কমেছে, চিনির দাম কিছুটা পতন
দীর্ঘদিন ধরে বেড়ে যাওয়া ডাল ও চিনির দাম সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা কমেছে।
- খোলা চিনি: ১০৫ টাকা প্রতি কেজি (১০ টাকা কমেছে)
- প্যাকেট চিনি: ১১৫ টাকা প্রতি কেজি (৫ টাকা কমেছে)
- মসুর ডাল (মোটা): ৯৫ টাকা প্রতি কেজি (৫-১০ টাকা কমেছে)
- মুগ ডাল: ১৬০-১৬৫ টাকা প্রতি কেজি (১০-১৫ টাকা কমেছে)
মসলার মধ্যে জিরার দামও কমেছে, এখন ৬০০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে।
বাজারে পেঁয়াজ, রসুন, আলু ও অন্যান্য সবজির দাম
এই গুলোতে দাম স্থিতিশীল রয়েছে:
- পেঁয়াজ: ৫৫-৬০ টাকা প্রতি কেজি
- রসুন: ১২০-২০০ টাকা প্রতি কেজি
- আদা: ১৪০-২২০ টাকা প্রতি কেজি
- আলু: ২৫-৩০ টাকা প্রতি কেজি
- শসা, গাজর: আগের মতোই দাম
পাড়া-মহল্লায় সামান্য দাম বেশি পাওয়া যায়।
ক্রেতাদের মন্তব্য ও বাজার পরিস্থিতি
মোহাম্মদপুর বাসিন্দা ইকবাল হোসেন বলেন, “আগে সবজির দাম কম থাকলেও এখন হঠাৎ করে সবজির ও চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় সংসারের ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। প্রতিবছর এমনই অবস্থা, ক্রেতাদের কষ্ট অনেক।”
বাজারের বর্তমান অবস্থায় সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ ও দিনমজুররা এর প্রভাব বেশ অনুভব করছেন।
বর্তমানে দেশের খাদ্য বাজারে কিছু অস্থিরতা থাকলেও, সরকারের নীতিমালা ও বাজার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মাধ্যমে দাম নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে। ক্রেতাদের জন্য প্রয়োজন যথাসম্ভব মৌসুমী সবজি ও স্থানীয় পণ্য কেনার, যাতে অপ্রয়োজনীয় অতিরিক্ত খরচ এড়ানো যায়।
সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত বাজারে চাল, সবজি ও অন্যান্য খাদ্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যাতে সাধারণ মানুষ উপকৃত হতে পারে।