জাতীয় সেমিকন্ডাক্টর টাস্কফোর্সের চূড়ান্ত সুপারিশ প্রধান উপদেষ্টাকে হস্তান্তর

বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাতে বিপ্লব ঘটাতে পারে এই সুপারিশপত্র। সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বাড়াতে দক্ষতা উন্নয়ন, নীতিগত সহায়তা এবং বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের ওপর জোর দিয়েছে টাস্কফোর্স।
বাংলাদেশে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে গঠিত জাতীয় টাস্কফোর্স তাদের চূড়ান্ত সুপারিশপত্র প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দিয়েছে। ৩ জুলাই (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) যৌথভাবে এই গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশপত্র উপস্থাপন করে।
ঘটনা ও ঘোষণা বিশদ
জাতীয় সেমিকন্ডাক্টর টাস্কফোর্সের সুপারিশপত্রটি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে তুলে দেন বিডা ও বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। সুপারিশপত্রে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের সম্ভাব্য কাঠামো ও বাস্তবায়নযোগ্য রোডম্যাপ উপস্থাপন করা হয়েছে।
টাস্কফোর্স তিনটি স্তম্ভকে ভিত্তি করে সুপারিশ করেছে—
- দক্ষতা উন্নয়ন (Skill Development)
- নীতিগত সহায়তা ও ব্যবসায়িক পরিবেশ (Business Environment & Policy Support)
- আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব (Global Partnership)
এই তিনটি ক্যাটাগরিতে মোট ২৩টি সুপারিশ পেশ করা হয়েছে।
পটভূমি
২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি গঠিত হয় জাতীয় সেমিকন্ডাক্টর টাস্কফোর্স। এতে সরকারি প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি খাত, একাডেমিক প্রতিষ্ঠান এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের (NRBs) প্রতিনিধিরা যুক্ত ছিলেন। মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের চাহিদা ও ঘাটতির বিশ্লেষণ করে সম্ভাব্য খাত চিহ্নিত করা এবং স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী কৌশল প্রণয়ন।
সেমিকন্ডাক্টর ভ্যালু চেইনের ডিজাইন, ফ্যাব্রিকেশন, টেস্টিং ও প্যাকেজিং ধাপে বাংলাদেশের বর্তমান সক্ষমতা বিশ্লেষণ করে টাস্কফোর্স সুপারিশ করেছে, প্রাথমিকভাবে চিপ ডিজাইন ও টেস্টিং-প্যাকেজিং খাতেই জোর দেওয়া উচিত।
সুপারিশের মূল দিকগুলো
স্বল্পমেয়াদী উদ্যোগসমূহ (২০২৫–২৬):
- ভার্চুয়াল নলেজ পোর্টাল চালু
- স্তরভিত্তিক সার্টিফিকেশন প্রোগ্রাম
- পাঁচটি শিল্প-মানের প্রশিক্ষণ ল্যাব
- ক্লিনরুম স্থাপন টেস্টিং ও প্যাকেজিংয়ের জন্য
মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনা (২০২৭–২৯):
- রোটেশনভিত্তিক প্রশিক্ষণ
- বিশেষায়িত শিক্ষা কারিকুলাম
- সীমিত সময়ের জন্য আমদানি শুল্ক ছাড়
- ‘সেমিকন্ডাক্টর ফান্ড’ গঠন, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল সহায়তা
দীর্ঘমেয়াদী উদ্যোগ (২০৩০ ও তার পর):
- NRBs কে বিনিয়োগ ও জ্ঞান-প্রদান প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্তকরণ
- সরকার-টু-সরকার (G2G) অংশীদারিত্ব
- গবেষণা ও উন্নয়ন (R&D) জোরদারকরণ
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস টাস্কফোর্সের উদ্যোগের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “দক্ষতা উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ভিত্তিতে তৈরি এই রোডম্যাপ বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টর ইকোসিস্টেমে অন্যতম উদীয়মান শক্তি হয়ে উঠবে।”
চৌধুরী আশিক মাহমুদ বলেন, “এই রোডম্যাপ প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতির দিকে যাওয়ার বাস্তব পথ দেখাচ্ছে। সঠিক পরিকল্পনায় এটি হবে আমাদের ভবিষ্যতের গেমচেঞ্জার।”
কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন
সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে একটি কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এই কমিটি প্রয়োজনীয় ওয়ার্কিং গ্রুপ তৈরি করে ধাপে ধাপে সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের দিকনির্দেশনা দেবে।
বিশেষজ্ঞ মতামত
তথ্যপ্রযুক্তি ও শিল্প বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্ব যখন চিপ সাপ্লাই চেইনকে পুনর্গঠন করছে, তখন বাংলাদেশের সামনে বিশাল সুযোগ। দক্ষ জনবল তৈরি, স্পষ্ট নীতি, এবং বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করা গেলে বাংলাদেশ এই খাতে নেতৃত্ব দিতে পারে।
“এটি শুধু একটি প্রযুক্তিগত পদক্ষেপ নয়, বরং ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক কাঠামোর রূপান্তরের সূচনা।” —একজন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা
উপসংহার
সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বাড়ানোর এই সুপারিশপত্র দেশের প্রযুক্তি ও অর্থনীতির জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। এখন দেখার বিষয়—এই সুপারিশগুলো কত দ্রুত বাস্তবায়ন হয় এবং ভবিষ্যৎ সরকারগুলো কতটা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
এম আর এম – ০১৫৯, Signalbd.com