ব্যবসায়ীরা চা খেতে এসে কর কমাতে বলে: অর্থ উপদেষ্টা

ব্যবসায়ীদের অনেকেই কর ফাইল কমানোর জন্য নানাভাবে চেষ্টা করেন, এমনকি ‘চা খাওয়ার’ অজুহাতে দেখা করে অনুরোধও করেন—এমন মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
চা খাওয়ার ছলে কর কমানোর অনুরোধ
বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (এসএমই) বিকাশে উদ্যোগী এসএমই ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অর্থ উপদেষ্টা জানান, ব্যবসায়ীরা তার সঙ্গে ‘মাত্র দশ মিনিটের জন্য’ চা খেতে চান বলে দেখা করতে আসেন। কিন্তু চা খাওয়ার পরেই তারা কর ফাইল কমানোর মতো ব্যক্তিগত অনুরোধ করেন।
তিনি বলেন, “বলেন চা খাবেন, কিন্তু পরে বলেন ট্যাক্স ফাইলটা একটু বেশি হয়ে গেছে, একটু দেখেন কমানো যায় কিনা।”
এসএমই খাতে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের তাগিদ
অনুষ্ঠানে তিনি দেশের এসএমই উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে বিদেশি অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর আহ্বান জানান। তিনি মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, হংকংসহ বিভিন্ন দেশের উদাহরণ টেনে বলেন, সেসব দেশে ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে সফল হচ্ছে তা শেখা দরকার।
“আমেরিকায় বরশি কিনতে গিয়ে দেখেছি সেটি এসেছে চীনের এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে। এমন উদ্ভাবন আমাদের দেশেও দরকার,”—বলেন তিনি।
রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনার সময় এসেছে
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানি এখনও তৈরি পোশাকনির্ভর। অথচ ৬০০–৭০০ পণ্য রপ্তানি করা সম্ভব। এতে আয় বাড়বে, জীবনমান উন্নত হবে।
তিনি বলেন, “আমাদের দেশের দুঃখ হলো—উদ্ভাবনের উদ্যোগ নেওয়া হয় না, উৎসাহও দেওয়া হয় না।”
ব্যাংক খাতে সংস্কার এবং স্বচ্ছতা
সংবাদমাধ্যমের প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এনবিআর নিয়ে নেতিবাচক সংবাদ ছাপার পর আন্তর্জাতিক মহলে জবাবদিহি করতে হয়েছে। তাই তিনি বলেন, সংবাদমাধ্যমে ইতিবাচক পরিবর্তনগুলো তুলে ধরা দরকার।
তিনি বলেন, “আমরা অল্প সময়ের জন্য এসেছি, ডিসেম্বরের মধ্যেই মৌলিক কিছু সংস্কার করবো।”
সাংবাদিকদের সম্মাননা
এই অনুষ্ঠানে এসএমই ফাউন্ডেশন-ইআরএফ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০২৫ প্রদান করা হয়। প্রথমবারের মতো আয়োজিত এই পুরস্কারে দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের ২১ জন সাংবাদিককে সম্মাননা দেওয়া হয়।
পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে ছিলেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জেসমিন আরা মলি, যমুনা টেলিভিশনের রিমন রহমান, চ্যানেল ২৪ এর রাকিব হোসেন, ফাইনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সাইফুল ইসলামসহ অনেকেই।
এসএমই ফাউন্ডেশনের সেবা ও চ্যালেঞ্জ
ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মো. মুসফিকুর রহমান বলেন, এ পর্যন্ত প্রায় ২০ লাখ উদ্যোক্তাকে সেবা দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ৫৫ শতাংশ নারী। তবে আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে সব চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
স্থায়ী অবকাঠামো গড়ার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন, “আরও বেশি উদ্যোক্তাকে সেবার আওতায় আনতে হলে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।”
“সিঙ্গাপুরে এক নারী উদ্যোক্তা ডিজাইনসহ অর্ডার দিতে যাচ্ছে রাতে, আর আমরা এখনও উদ্যোগ নিতে ভয় পাই”—ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, অর্থ উপদেষ্টা
উপসংহার
এই ধরনের বক্তব্য এবং দৃষ্টিভঙ্গি থেকে স্পষ্ট, এসএমই খাতের উন্নয়নে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা নয়, বরং চিন্তাধারায়ও পরিবর্তন দরকার। উদ্যোক্তাদের উৎসাহ, বৈচিত্র্যময় রপ্তানি এবং আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার সমন্বয়েই সম্ভব এক টেকসই অর্থনৈতিক অগ্রগতি।
এম আর এম – ০১৪৩, Signalbd.com